জীবনধারা
কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার: দিনলিপি গণনার ইতিবৃত্ত
বাংলা ক্যালেন্ডার বা বাংলা বর্ষপঞ্জি। নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতি ও আবেগ। প্রাচীনকাল থেকে তদানীন্তন পদ্ধতিগুলোর স্পর্শে বাঙালির দিনলিপির গণনা সমূহ বিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে। জুড়ে গেছে নানা অঞ্চলের নানা রীতি। জীবনের বিশেষ দিবসগুলোর হিসাব রাখার তাগিদে ভিন্ন রূপ পেয়েছে বাংলা পঞ্জিকা।কিন্তু এর শুরুটা কোথায়, কীভাবে এল বাংলা ক্যালেন্ডার! চলুন, বিবর্তনের সময়রেখা থেকে খুঁজে নেওয়া যাক সেই বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস।
বাংলা বর্ষপঞ্জি ধারণার প্রাচীনতম বিকাশ
জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ছিল স্বতন্ত্র বর্ষপঞ্জি পদ্ধতি। তাদের ছয়টি বেদাঙ্গের একটির নাম ছিল জ্যোতিষ। এই শাস্ত্র মতে বৈদিক প্রথাগত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হতো।
রাজা বিক্রমাদিত্য প্রবর্তিত বিক্রমীয় বর্ষপঞ্জিকা চালু হয়েছিল ৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে। বিক্রমাদিত্য নামের এই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো ভারত ও নেপালের বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামগুলোতে।
একদম প্রথম দিকে হিন্দু পণ্ডিতদের মধ্যে সময় গণনার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ পদ্ধতি ছিল চাঁদ-সূর্য ও গ্রহ পর্যবেক্ষণ। সংস্কৃতের জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন গ্রন্থে এর নিদর্শন পাওয়া যায়।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পঞ্চম শতাব্দীতে আর্যভট্টের আর্যভট্টিয়া, ষষ্ঠ শতকে লতাদেবের রোমাক ও বরাহমিহিরের পঞ্চ সিদ্ধান্তিক, সপ্তম শতাব্দীতে ব্রহ্মগুপ্তের খন্ডখ্যাদ্যাক এবং অষ্টম শতাব্দীতে সিদ্ধাধিশ্যাক।
পৃথকভাবে বাংলা ভাষায় ক্যালেন্ডারের ধারণাটির সূত্রপাত ঘটেছিল সপ্তম শতাব্দীর হিন্দু রাজা শশাঙ্কের শাসনামলে। প্রাচীন নিদর্শন স্বরূপ দুটি শিব মন্দিরে পাওয়া যায় বঙ্গাব্দ শব্দটি, যার শাব্দিক অর্থ বাংলা সন। মন্দির দুটির বয়স মুঘল আমলের থেকেও বহু শতাব্দীর পুরোনো।
দশম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে সম্পন্ন হয়েছিল সূর্যসিদ্ধান্ত গ্রন্থটি। এটি গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যমে সময় গণনা পদ্ধতির গ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী। এই সংস্কৃত গ্রন্থে লিপিবদ্ধ পদ্ধতি এখনও অনুসরণ করা হয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ডের মতো ভারতীয় রাজ্যগুলোতে।
এই সূর্যসিদ্ধান্তেই সর্বপ্রথম বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে বৈশাখ শব্দটি উল্লেখ করা হয়।
অবশ্য ত্রয়োদশ শতাব্দীর আগে বাংলার রাজবংশগুলোর মধ্যে দেখা যায় বিক্রমাদিত্যের ব্যবহার। পালদের শাসনামলে বৌদ্ধ গ্রন্থ ও শিলালিপিতে পাওয়া যায় আশ্বিন ও বিক্রম নামের মাসগুলো।
আরো পড়ুন: বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস: রূপরেখায় অপশক্তির অবসান কামনায় শান্তি মিছিল
বর্তমান বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন
বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকাল ছিল ১৪৯৪ থেকে ১৫১৯ সাল পর্যন্ত। বাংলার মুসলিম শাসকদের মধ্যে বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরির ব্যাপারে মুঘল সম্রাট আকবরের পাশাপাশি তার নামটিও শোনা যায়।
হিজরি অনুসারে বাঙালিদের থেকে ভূমি কর আদায়ের রীতিটি ছিল মুঘল শাসনামলেও। চান্দ্র বর্ষপঞ্জি ও সৌর কৃষি চক্রের মাঝে বেশ অসঙ্গতি ছিল। মুঘল সম্রাট আকবর ফসল কাটার কর বছরের সমস্যা সমাধানের জোর তাগিদ অনুভব করেন। তিনি চান্দ্র বর্ষপঞ্জি ও সৌর বর্ষপঞ্জির সমন্বয়ে নতুন বর্ষপঞ্জিকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। এই কাজের দায়িত্ব অর্পণ করা হয় রাজ্যের প্রধান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতুল্লাহ শিরাজির উপর।
নতুন নির্মিত পঞ্জিকার নাম ছিল তারিখ-ই-ইলাহি। এখানে জুলাই থেকে পরবর্তী বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১২ বছরের সময়ের নাম দেওয়া হয় ফসলি সন। আর এরই ভিত্তিতে তারিখ-ই-ইলাহিকে ফসলি বর্ষপঞ্জিও বলা হতো।
পরে মুঘল গভর্নর নবাব মুর্শিদ কুলি খান সম্রাট আকবরের এই নীতি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন পুন্যাহের হিসাব পরিচালনার জন্য। পুন্যাহ হচ্ছে প্রজাদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি কর আদায়ের দিন।
এখানে চান্দ্র ও সৌর বর্ষপঞ্জির সংমিশ্রণটি আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ও আকবরের মধ্যে আসলে কে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন- তা নিয়ে বেশ দ্বিমত আছে। অবশ্য আকবরের মুঘল দরবার ছাড়া ভারতের অন্যত্র এই পদ্ধতি তেমন একটা ব্যবহৃত হয়নি। এমনকি তার মৃত্যুর পর বর্ষপঞ্জিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
মাসের দিনগুলোর প্রতিটির আলাদা আলাদা নাম ছিল তারিখ-ই-ইলাহি’র একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। মাসগুলোর নামও ছিল বর্তমান নাম থেকে ভিন্ন।
আকবরের নাতি শাহজাহান গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের মতো রবিবার থেকে সপ্তাহ শুরুর প্রক্রিয়াটি প্রচলন করেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সংস্কার আসে তারিখ-ই-ইলাহি’তে। সৌরচান্দ্রিক বা শক বর্ষপঞ্জির মাসের নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এখানকার মাসগুলোর নামে পরিবর্তন আনা হয়। শক পঞ্জি মূলত সৌর ও চান্দ্র বর্ষপঞ্জির সমন্বিত রূপ, যার প্রতিটি বছরকে বলা হয় শক সাল বা শকাব্দ।
প্রতিটি দিনের ভিন্ন নামের বদলে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের মতো শুধুমাত্র সাত দিনের সপ্তাহ ঠিক করা হয়। আর এটিই হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহৃত বাংলা ক্যালেন্ডারের মূল ভিত্তি।
আরো পড়ুন: বিশ্বসেরা ১০ পিরামিড: চিরন্তন কিংবদন্তির খোঁজে
সময়ের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির বিবর্তন
ভারতবর্ষে বর্ষপঞ্জির বিকাশ
১৯৫৭ সালের ২২ মার্চ ভারতে নতুনভাবে সংস্কার করা জাতীয় বর্ষপঞ্জির প্রচলন হয়। বিভিন্ন রাজ্যসহ কেন্দ্রের সর্বত্রে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর সঙ্গে এটি ব্যবহার করা হতে থাকে। এতে সূর্য সিদ্ধান্ত-এর নিরয়ণ বর্ষ গণনা রীতির বদলে আনা হয় সায়ন সৌর পদ্ধতি এবং প্রতিটি মাসের দৈর্ঘ্য স্থির রাখা হয়। সেই সঙ্গে জ্যোতি পদার্থবিদ্যার ভিত্তিতে রাখা হয় কিছু প্রস্তাবনা। সেগুলো ছিল-
বৈশাখ থেকে ভাদ্র প্রথম পাঁচ মাসের জন্য ৩১ দিন করার। পরবর্তী সাত মাস, তথা- আশ্বিন থেকে চৈত্র মাসের জন্য ৩০ দিন করার এবং লিপ-ইয়ার বা অধিবর্ষের বেলায় ৩১ দিনে চৈত্র মাস গণনার।
প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় এগুলোর ভিত্তিতেই নতুন আরেকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সেখানে ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন নির্ধারণ করার কথা উল্লেখ ছিল।
বাংলাদেশে বাংলা ক্যালেন্ডার সংস্কার
১৯৬৩ সালে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত শহীদুল্লাহ কমিটির পক্ষ থেকে রাত ১২টার পর থেকে তারিখ পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর আগে নতুন তারিখ হিসাব করা হতো সূর্যোদয়ের সঙ্গে। প্রস্তাবটি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশ কর্তৃক গৃহীত হয় ১৯৮৭ সালে। সে অনুসারে ১৯৮৮-৮৯ অর্থবছরে নির্দেশনাও দেওয়া হয় বাংলা দিনপঞ্জিকা বানানোর। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়।
বাংলা ক্যালেন্ডারকে আরও বিজ্ঞানভিত্তিক করার উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালের ২৬ জুলাই একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ভাষা, গণিতজ্ঞ, পদার্থবিজ্ঞানী ও বিভিন্ন সংস্কৃতিজনদের এই কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন-উর-রশিদ। এই কমিটির পক্ষ থেকে আরও ২০টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
এগুলোর মধ্যে একটি ছিল চৈত্রের বদলে ফাল্গুন মাসকে লিপ-ইয়ারের মাস হিসেবে ঠিক করা। সেখানে উল্লেখ ছিল যে, গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারে লিপ-ইয়ারের ফেব্রুয়ারি মাসকে অনুসরণ করে বাংলা বর্ষপঞ্জিকার ফাল্গুন মাসে ৩০ দিনের জায়গায় হবে ৩১ দিন।
আরো পড়ুন: একুশে বইমেলার শিকড়ের সন্ধান
এতে দেখা যায়-
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ৮ ফাল্গুন হলেও, ২০১৫ সালে তা হয়ে যাচ্ছে ৯ ফাল্গুন। এ ছাড়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিবস নিয়ে অসমাঞ্জস্যতা ধরা পড়ে।
ফলে জাতীয় দিবসগুলোকে ঠিক করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে তৃতীয়বারের মতো গঠিত হয় আরও একটি কমিটি। এখানে সভাপতি হিসেবে ছিলেন বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
কমিটির অন্যরা ছিলেন- একাডেমির পরিচালক অপরেশ কুমার ব্যানার্জি, পদার্থবিজ্ঞানী জামিল চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক অজয় রায়, অধ্যাপক আলী আসগর।
তাদের প্রস্তাব ছিল-
- প্রথম ছয় মাস; তথা- বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস হবে ৩১ দিনে।
- কার্তিক থেকে মাঘ এবং চৈত্র এই পাঁচ মাস হবে ৩০ দিনে।
- শুধু ফাল্গুন মাস গণনা হবে ২৯ দিনে।
- অধিবর্ষের বছরে ফাল্গুন মাসে একদিন যোগ করে গণনা করা হবে ৩০ দিনে।
এই প্রস্তাবটি চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়ে সে অনুসারে ২০১৯ সালে বাংলাদেশে তৈরি হয় সরকারি বর্ষপঞ্জি। আর এটিই বর্তমানে চালু আছে বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
পরিশিষ্ট
দেয়ালে ঝুলানো কাগুজে দিনপঞ্জির প্রতিটি সংখ্যা ও শব্দ মনে করিয়ে দেয় বাংলা বর্ষপঞ্জির ইতিহাস ও স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা। দিনলিপি গণনার এই ইতিবৃত্ত জানিয়ে দিল যে, ওগুলো নিজেরাই এক সমৃদ্ধ ইতিহাসের ধারক।ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে এখনও অনুসরণ করা হয় পুরোনো বাংলা বর্ষপঞ্জি পদ্ধতি। যুগে যুগে ভিন্ন নাম পেলেও বাঙালি সম্প্রদায়ে সরব ছিল বাংলা বছর, মাস ও দিনের ধারণা। এর প্রভাব এখনও অটুট আছে ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় আনুষ্ঠানিকতায়। দিন ও সপ্তাহ সর্বস্ব বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস এখন দ্বিধাহীন সময় হিসেবের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
আরো পড়ুন: পহেলা বৈশাখ: বাংলা নববর্ষের উৎপত্তি এবং ইতিহাস
জাতীয় কবি নজরুলের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার (২৭ আগস্ট) সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
এছাড়াও ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে খ্যাত কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলা সাহিত্যের একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তার ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে মহান কবির জীবন ও কর্ম স্মরণে।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলা ভবন প্রাঙ্গণে অপরাজেয় বাংলায় জড়ো হন।
সেখান থেকে তারা শোভাযাত্রা সহকারে কবির কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আসরের নামাজের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও শোভাযাত্রা ও দোয়ার মাধ্যমে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের পক্ষ থেকে কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কাদের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হওয়ায় দেশ থেকে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎখাত করতে জাতীয় কবির আদর্শে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন: রবিবার জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী
বিএনপির প্রবীণ নেতা রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলও বিদ্রোহী কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট সন্ধ্যা ৭টায় ধানমন্ডির নিজস্ব মিলনায়তনে বিশেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। অনুষ্ঠানটি একই সঙ্গে তাদের ফেসবুক গ্রুপ ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, বাংলাদেশ বেতার সহ রেডিও স্টেশন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জাতীয় কবির জীবন ও কর্মের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ ছাড়া নজরুল তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশে তার বিপ্লবী এবং দর্শনীয় সাহিত্যকর্মের জন্য ব্যাপকভাবে সম্মানিত।
কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, নজরুলের ২১ বছরের সাহিত্যিক জীবনে তিনি ২ হাজার ৬০০টি গান, ৬০০টি কবিতা, ৩টি বই এবং ৪৩টি প্রবন্ধ তৈরি করেছিলেন।
শৈশবে বাবা মারা গেলে পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয় নজরুলকে। এ কারণে মসজিদে তত্ত্বাবধায়ক ও মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল তাকে। পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় একটি পেশাদার ‘লেটো’ গানের দলে কাজ করার জন্য ৯ বছর বয়সে স্কুল ছেড়েছিলেন তিনি।
দলটির সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হন। এক বছর পরে তিনি আবার স্কুলে যান এবং মাথারুন ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু তার আর্থিক দুরবস্থার কারণে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণিতে আরও একবার বাদ পড়েন।
কিছু সময় পর পুলিশ অফিসার কাজী রফিজুল্লাহ তাকে নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তার বাড়ির কাছে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করান।
১৯৭১ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে তার সামরিক চাকরি শুরু করার কয়েক বছরের মধ্যে নজরুল তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন।
তিনি ১৯২১ সালে তার কালজয়ী কবিতা ‘বিদ্রোহী’ (দ্য রিবেল) লেখেন এবং ১৯২২ সালে ‘ধূমকেতু’ (দ্য ধূমকেতু) একটি মাসিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা করেন।
আরও পড়ুন: স্মরণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম
ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘন ঘন জাতীয়তাবাদী জড়িত থাকার কারণে নজরুল ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের খপ্পরে পড়েন। তিনি কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ (একজন রাজনৈতিক বন্দির জবানবন্দি) লেখেন।
তার কাজগুলো পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং তার কবিতাগুলো অনেক বাঙালি ও জাতীয়তাবাদীকে পাকিস্তানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
স্বাধীনতা, মানবতা, প্রেম ও বিপ্লব নজরুলের অসাধারণ সাহিত্য বার বার এসেছে। তিনি মৌলবাদ ও সব ধরনের বর্ণ, লিঙ্গ ও ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ছিলেন।
নজরুল ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধও প্রকাশ করেছেন। যদিও তার গান ও কবিতা সমালোচকদের কাছ থেকে সর্বাধিক প্রশংসা পেয়েছে। তিনি তার লেখায় আরবি ও ফারসি শব্দের উদার ব্যবহার এবং বাংলা গজল সুর জনপ্রিয় করার জন্য বিখ্যাত।
তিনি ‘নজরুল গীতি’ নামে পরিচিত তার নিজস্ব সংগীত ধারা আবিষ্কার করেছিলেন। যার মধ্যে অনেকগুলো ভিনাইল ও এইচএমভি রেকর্ডে প্রকাশিত হয়েছিল।
নজরুল যখন ৪৩ বছর বয়সে একটি অজ্ঞাত রোগে ভুগছিলেন এবং ১৯৪২ সালে তিনি তার কণ্ঠস্বর এবং স্মৃতিশক্তি হারাতে শুরু করেন।
ভিয়েনার একটি মেডিকেল টিম বলে তার রোগটি ছিল ‘পিকস ডিজিজ’। একটি বিরল ও মারাত্মক নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ।
বাংলাদেশ সরকার এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে নজরুলের পরিবার বাংলাদেশে চলে আসেন এবং ১৯৭২ সালে ঢাকায় স্থায়ী হন। একই বছর বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘জাতীয় কবি’ খেতাবে ভূষিত করেন।
বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে তার অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডিলিট এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট বিদ্রোহী কবি ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের একটি মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
আরও পড়ুন: নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ ঘোষণার গেজেট প্রকাশের দাবিতে রিট
অ্যানির তৃতীয় একক প্রদর্শনী ‘কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’ এএফডিতে শুরু
শিল্পী আতিয়া ইসলাম অ্যানির তৃতীয় একক শিল্প প্রদর্শনী ‘কনটেম্পরারি ন্যারেটিভস’ শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ধানমন্ডির অ্যালায়েন্স ফ্রাঙ্কেস ডি ঢাকায় (এএফডি) উদ্বোধন করা হয়েছে।
এএফডির লা গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস চ্যান্সেলর ড. রুবানা হক এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী।
অ্যানির শৈল্পিক প্রচেষ্টা সামাজিক সমালোচনার সারমর্মকে আবদ্ধ করেছে। তার চিত্রকর্ম সমসাময়িক সমাজে নারীর অবস্থাকে নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছে।
আরও পড়ুন: হাসিনাকে নিয়ে আয়োজিত শিল্প প্রদর্শনীর প্রশংসা ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূতের
অ্যানির স্বতন্ত্র শৈলী সামাজিক চেতনার সূক্ষ্মতাকে ধারণ করে। তার শৈল্পিক অভিব্যক্তির মাধ্যমে, তিনি শোষণ এবং মানুষের আবেগ লঙ্ঘনের প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে তুলে করেন, শ্রোতাদের প্রতিফলিত করতে প্ররোচিত করেন।
শিল্পী সামাজিক দুর্নীতি, দ্বন্দ্ব এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ের চিহ্নগুলো চিত্রিত করেছেন, তার শিল্পকর্মে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রিত করেছেন এবং এই বিষয়গুলোর প্রতি তার অঙ্গীকারের উপর জোর দিয়েছেন। এবং এটি করার জন্য, তার অভিব্যক্তিগুলো এমন একটি ভাষায় কথা বলে যা রূপক, উপমা, চিহ্ন এবং প্রতীকগুলোর সঙ্গে একীভূত।
এই প্রদর্শনীটিতে ২২টি নির্বাচিত আক্রাইলিক পেইন্টিংয়ের সংগ্রহ প্রদর্শন করে, যা ২০১২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে করা হয়েছিল৷
শিল্পী হিসেবে শিল্পী আতিয়া ইসলাম অ্যানির যাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে। এই ইনস্টিটিউট থেকে তিনি ১৯৮৩ সালে স্নাতক এবং ১৯৮৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
২০০২ সালে গ্যালারী-২১ -এ 'নারী ও সমাজ' শিরোনামে তার প্রথম একক শিল্প প্রদর্শনী হয়েছিল। ২০০৯ সালে অ্যানির বেঙ্গল শিল্পালয়ে 'কালবেলা' তার দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী হয়েছিল।
এছাড়াও তিনি ২০১৮ সালে ১৮তম এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল বাংলাদেশ-এ ৬৮টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সম্মানসূচক গ্র্যান্ড প্রাইজ অর্জন করেছিলেন।
এএফডি-এ অ্যানির সর্বশেষ প্রদর্শনীটি ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রদর্শনীটি সোমবার থেকে শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে (রবিবার বন্ধ থাকে)।
আরও পড়ুন: ২১ আগস্টের ভয়াবহতার উপর শিল্পকলায় স্থাপনা শিল্প প্রদর্শনী
বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০ কফি
কাজের একঘেয়েমিতা কাটানোতে যে কোনও পানীয় -এর এক যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে কফি। পাশাপাশি পুষ্টিগুণেও পিছিয়ে নেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে চাষকৃত এই উদ্ভিজ্জ উপাদানটি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নিজের এক সমৃদ্ধ ইতিহাসকে লালন করে এই শক্তিবর্ধক পানীয় এখনও সকলের প্রিয়। শুধুমাত্র যে জীবনধারায় একটি স্বতন্ত্র সংযোজন তা নয়, সামাজিক মর্যাদারও এক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই কফির। স্বভাবতই ধরন ভেদে বিভিন্ন কফিতে দামের বেশ তারতম্য থাকে। শুধু কি তাই, এগুলোর ভেতর কিছু কিছুর দাম একদম চোখ কপালে তুলে দেয়ার মতো! তেমনি কয়েকটি দামী কফির তথ্যসমগ্র এই নিবন্ধটি। চলুন, বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি কফি সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
পৃথিবীর সব থেকে দামি ১০টি কফি
ব্ল্যাক আইভরি
থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে সুরিন প্রদেশে এর উৎপত্তি। মূলত চিয়াং সেনের গোল্ডেন ট্রায়্যাঙ্গেল এশিয়ান এলিফ্যান্ট ফাউন্ডেশনে এটি প্রথম উৎপাদিত হয়েছিল।
ব্ল্যাক আইভরি তার অনন্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য বিশ্ববিখ্যাত। অ্যারাবিকা কফি বীজগুলো প্রথমে হাতিদের খাওয়ানো হয়। অতঃপর সেগুলো সংগ্রহ করা হয় তাদের বর্জ্য থেকে। বীজগুলো হাতির পেটে বিভিন্ন এনজাইমের মাধ্যমে পরিপাক ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হয়। হাতির পাচক এনজাইম বীজের প্রোটিন ভেঙ্গে ফেলে, যার ফলে কফি মসৃণ ও কম অম্লীয় হয়। এই অনন্য গাঁজন প্রক্রিয়াটি কফির ব্যতিক্রমী ঐতিহ্যবাহী স্বাদের জন্য দায়ী।
এই স্বাদের জন্য এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল কফি হিসেবে পরিচিত, প্রতি কিলোগ্রামে যার মূল্য প্রায় ২ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা ২ লাখ ১৮ হাজার ৮৬১ টাকা। বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে এই অসাধারণ কফির এক কাপ প্রায় ৫০ মার্কিন ডলারে পরিবেশন করা হয়।
আরও পড়ুন: খাদ্যতালিকায় ৫ খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবেটিস
কপি লুওয়াক
ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা, জাভা, বালি, সুলাওয়েসি এবং পূর্ব তিমুরে উৎপাদিত হয় এর বীজ। এর উৎপাদনের আরও একটি জায়গা ফিলিপাইন, যেখানে এর বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম শোনা যায়। অবশ্য সরবরাহ কেন্দ্র হিসেবে ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনই বহুলাংশে প্রসিদ্ধ।
এই কফি তৈরি পদ্ধতির সঙ্গে এশিয়ান পাম সিভেট নামের বিড়ালের হজম প্রক্রিয়া ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর এই কারণে এটি সিভেট কফি নামেও পরিচিত। সিভেট কফি চেরি খাওয়ার পর এদের মল থেকে সংগ্রহ করা পরিবর্তিত বীজগুলো। সিভেটের পরিপাক প্রণালীর ভেতর দিয়ে যাবার সময় গাঁজনের মাধ্যমে এগুলোর আভ্যন্তরীণ গঠন পরিবর্তন হয়। আর এই গাঁজনের ফলেই কফি এক স্বতন্ত্র স্বাদের অধিকারী হয়।
এই ব্যতিক্রমী স্বাদ কফি লুওয়াককে দিয়েছে আকাশচুম্বী দাম। প্রাথমিক অবস্থায় সংগৃহীত এর বীজের জন্য খরচের অঙ্ক প্রতি কেজিতে ১ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করলে দাড়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৬০ টাকা। অবশ্য বীজের উৎপত্তিস্থল এবং গুণাগুণের ওপর ভিত্তি করে খুচরা মূল্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।
আরও পড়ুন:
ওসপিনা গ্র্যান ক্যাফে
কলম্বিয়ার আন্দিজের আগ্নেয়গিরির উচ্চভূমি বিশেষ করে ফ্রেডোনিয়া ও অ্যান্টিওকিয়া অঞ্চল এই কফি বীজের উৎপাদনস্থল।
কলম্বিয়ান সংস্কৃতিতে ওসপিনা কফি অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে। ১৮৩৫ সালে ডন মারিয়ানো ওসপিনা রদ্রিগেজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এই কফি বিশ্বব্যাপী কফির জনপ্রিয়তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং শিল্পের অগ্রগতির প্রতি ওসপিনা পরিবারের নিবেদন এখনও প্রভাবিত করে চলেছে কলম্বিয়ান কফি সংস্কৃতিকে। তাই শুধু তার ব্যতিক্রমী স্বাদের জন্যই নয়, এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্যও ওসপিনা কফি বিশ্ব জুড়ে সুপরিচিত।
এই কফির রেসিপিতে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট উপাদান, কফির উৎপত্তিস্থল এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির কারণের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয় এর দাম। এর কিছু সাধারণ জাত প্রতি পাউন্ড ১২০ মার্কিন ডলারে(১৩ হাজার ১৩২ বাংলাদেশি টাকা) বিক্রি হয়। কিন্তু একচেটিয়া ওসপিনা গ্র্যান্ড শ্রেণীর লোকেরা এর প্রতি পাউন্ডের জন্য ১ হাজার ৪০০ মার্কিন ডলার(১ লাখ ৫৩ হাজার ২০৩ বাংলাদেশি টাকা) ব্যয় করে।
আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে দামি ১০টি খাবার
এল ইঞ্জেরতো পিবেরি
এই কফির উৎপত্তি উচ্চ-মানের কফি উৎপাদনের জন্য স্বনামধন্য মধ্য আমেরিকার গুয়াতেমালায়। এগুলো প্রকৃতপক্ষে সিয়েরা দে লস কুচুমাটানেসের নিকটবর্তী হুয়েহুতেনাঙ্গোর উচ্চভূমিতে জন্মে। খামারের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৯২০ মিটার পর্যন্ত।
আগুইরে পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে গুণমান এবং স্থায়িত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে খামার পরিচালনা করে আসছে। খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ এল ইঞ্জেরতো লাভাবিহীন মাটি, প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সর্বোত্তম তাপমাত্রা দ্বারা প্রভাবিত অঞ্চলের সুবিধা পায়।
কফির বিশেষত্ব বাড়ানোর জন্য এটি এক সুক্ষ্মতিসুক্ষ্ম প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। খামারে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পৃথকীকরণ পদ্ধতিতে পিবেরি বীজগুলো আলাদা করা হয়। অতঃপর এগুলোকে একক-চ্যানেল ওয়াশিং প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পরিচালিত করা হয়। এখানে দুই রাউন্ডে বীজ ভাঙ্গন চলতে থাকে। এই প্রক্রিয়াগুলো সামগ্রিকভাবে কফিতে একটি দারুণ ঘ্রাণ যুক্ত করে।
এর প্রিমিয়াম মূল্য সঠিক যত্ন ও দক্ষতা সহ ব্যতিক্রমী বীজ উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কফিগুলোর সারিতে শামিলকৃত এল ইঞ্জেরতোর মূল্য পাউন্ড প্রতি প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার(৫৪ হাজার ৭১৫ বাংলাদেশি টাকা)।
আরও পড়ুন: প্যাকেটজাত আলুর চিপস কেন শরীরের জন্য ক্ষতিকর?
এস্মারেল্ডা গেইশা
একে সংক্ষেপে গেইশা কফি নামেই সবাই চেনে। কফির দেশ ইথিওপিয়ার গোরি গেশা বনে এর উৎপত্তি। সর্বপ্রথম ইথিওপিয়াতে উদ্ভূত হলেও, এটি এখন আফ্রিকা, এশিয়া এবং আমেরিকার বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত হয়। পানামানিয়ান গেইশা জাতটি বিশেষভাবে তার অদ্বিতীয় জেনেটিক ফিঙ্গারপ্রিন্টের জন্য বিখ্যাত।
এস্মারেল্ডার গেইশার মুখে লেগে থাকা স্বাদের নেপথ্যে রয়েছে জুঁই ফুলের নির্যাস, চকোলেট, মধু এবং কালো চা। যথাযথ যত্নের মধ্যে নির্দিষ্ট ধরনের চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির ফলাফল এই অস্থিরতা দূর করা পানীয়টি। এর ব্যতিক্রমী স্বাদ সৃষ্টির জন্য বীজগুলো সাবধানে হাতে বাছাই করা হয়, যেন ক্ষেত থেকে কেবল পরিণতগুলোই উঠে আসে। উপরন্তু ভেজা অথবা শুকনো প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে কফির চূড়ান্ত স্বাদের বৈশিষ্ট্যকে অক্ষুন্ন রাখা হয়।
এর আন্তর্জাতিক খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত গতিতে বেরে চলেছে এর দাম। কয়েক বছর ধরেই পৃথিবীর সব থেকে ব্যয়বহুল কফিগুলোর একটি হিসেবে এর নাম উঠছে। এস্মারেল্ডা গেইশার রেকর্ড মূল্য পাউন্ড প্রতি ৬০১ মার্কিন ডলার (৬৫ হাজার ৭৬৮ বাংলাদেশি টাকা)।
আরও পড়ুন: মাশরুমের পাঁচ পদের সহজ রেসিপি
সেন্ট হেলেনা
নামকে অনুসরণ করে সঙ্গত কারণে এই কফি জন্মে ব্রিটিশদের বিদেশি অঞ্চল আটলান্টিক দ্বীপ সেন্ট হেলেনাতে। এখানকার আগ্নেয়গিরির মাটি এবং হালকা জলবায়ুতে একচেটিয়াভাবে চলে এই কফির চাষ।
এই কফির নেপথ্যে রয়েছে ১৮ শতকে দ্বীপে আগত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাস। তাদের মাধ্যমেই দ্বীপবাসীদের মধ্যে কফির আগ্রহ স্থাপন হয়। এখনও এটি কফি উৎসাহীদের শক্তি বর্ধক তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি দ্বীপের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এই কফি তৈরির প্রক্রিয়ার জন্য সেন্ট হেলেনা দ্বীপের অনূকুল পরিবেশ প্রধান প্রভাবক। দ্বীপের আগ্নেয়গিরির মাটি এবং হালকা জলবায়ু সাহায্য করে এর বেড়ে ওঠাতে। সেই সঙ্গে যত্নশীল চাষাবাদ এবং প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি এতে দান করে জগদ্বিখ্যাত স্বাদ। এসব কিছু একত্রে অবদান রাখে আমুল বৈচিত্র্যে, যার জন্য এর একটি আলাদা জায়গা তৈরি হয়েছে কফি শিল্পে।
সেন্ট হেলেনা কফির সীমিত যোগান এবং ব্যতিক্রমী স্বাদ নির্ধারণ করে এর প্রিমিয়াম মূল্য। নিয়মিত জাতগুলো প্রতি পাউন্ডে প্রায় ৮০ মার্কিন ডলারে(৮ হাজার ৭৫৪ বাংলাদেশি টাকা) বিক্রি হয়। এই ধরনের কফির সমকক্ষ না থাকায় কখনো এর দামের পরিধি বিস্তৃত হয় পাউন্ড প্রতি ১৪৫ মার্কিন ডলার(১৫ হাজার ৮৬৭ বাংলাদেশি টাকা) পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: মধু দিয়ে মজাদার পাঁচ পদ
মোলোকাই প্রাইম
অসাধারণ হাওয়াইয়ান এই ঐশ্বর্য্য স্থানীয় আগ্নেয়গিরির মাটিসহ পুরো মোলোকাই দ্বীপের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের কেন্দ্রবিন্দু। এই কফির জাতটি প্রাথমিকভাবে লাল কাতুয়াই বীজের সমন্বয়ে গঠিত, যা দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চাষ করা হয়ে আসছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮০-এর দশকে। মোলোকাই দ্বীপের অনন্য ভৌগলিক অবস্থান এবং খনিজ সমৃদ্ধ মাটি এই গাছের বিকাশের জন্য একটি আদর্শ ভিত্তি প্রদান করে।
এই কফির মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর শক্তিশালী, সতেজ ও মজবুত গঠন। এর বীজ অধিক তাপে রোস্ট করার জন্য বেশ উপযুক্ত। এই গভীর শক্ত মেটে ভাবটা এসেছে আগ্নেয়গিরির মাটিতে বেড়ে ওঠার কারণে। ফলশ্রুতিতে, এর প্রক্রিয়াকরণটিও সম্ভব হয় বেশ ঝক্কি-ঝামেলামুক্তভাবে।
ব্যতিক্রমী মানের মোলোকাই প্রাইম কফির দামের তারতম্য ঘটে এর চাষ এবং প্রক্রিয়াকরণের সময় গৃহীত যত্নের উপর ভিত্তি করে। সাধারণত এর প্রতি পাউন্ডের মূল্য ৬০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৬ হাজার ৫৬৬ টাকা।
আরও পড়ুন: গরমে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে ৬ খাবার
কোনা এক্সট্রা ফ্যান্সি
এই কফি এসেছে হাওয়াইয়ের বিগ আইল্যান্ডের বিখ্যাত কোনা অঞ্চল থেকে। কফি চাষের সর্বোত্তম পরিবেশের জন্য বেশ সুপরিচিত এই জায়গা। হুয়ালালাই এবং মাউনা লোয়া ঢাল সহ কোনা জেলাগুলো এক সুবিধাজনক পরিবেশ প্রদান করে। এই পরিবেশে অন্তর্ভুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল ও বিকালের মেঘ-বৃষ্টি, শীতল রাত এবং খনিজ সমৃদ্ধ আগ্নেয়গিরির মাটি। পরিবেশের অসাধারণ এই সমন্বয় সাধনটিই নামের মত কফিটির স্বাদেও দিয়েছে ফ্যান্সি ফ্লেভার।
এর বিশেষত্ব হচ্ছে- এর স্বাদের ভারসাম্য এবং পানীয়ের রঙের উজ্জ্বলতা। দামের তাৎপর্যটি মূলত কোনা অঞ্চলের নামের সঙ্গে সংযুক্ত। এর সঙ্গে অবদান রাখে যত্ন সহকারে প্রক্রিয়াকরণটিও। পাউন্ড প্রতি ৭৫ মার্কিন ডলার (৮ হাজার ২০৭ বাংলাদেশি টাকা) খরচ করা হয় এই কফির পেছনে।
আরও পড়ুন: চিপসের পরিবর্তে কিছু স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার
ফ্যাজেন্ডা স্যান্তা ইনেস
এই ব্রাজিলিয়ান রত্নের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ মিনাস গেরাইসের কারমো দে মিনাস অঞ্চলে। মান্টিকেইরা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান এই খামারের, যেটি কয়েক যুগ ধরে গুণমান নিশ্চিত করে কফি চাষ করে আসছে।
বীজগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়। আবাদের সময় বীজের ত্বক শুকানোর কারণে ফলের স্বাদগুলো বীজের মধ্যে ঢুকতে পারে।
ফ্যাজেন্ডা স্যান্তা ইনেসের বিশেষ দিকগুলো হলো এর পানীয় এর মিষ্টি, উজ্জ্বল অম্লতা এবং লেবু-লবঙ্গ ফ্লেভার। এর চকোলাটি বডি এবং ক্রিমি মাউথফিল প্রতিটি চুমুককে স্বাদ এবং একই সঙ্গে সুগন্ধের আমেজ দেয়।
কফির বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি, ঐতিহ্য এবং উদ্ভাবনের জন্য এর দামেও বেশ তারতম্য আসে। পাউন্ড প্রতি এই কফির মূল্য ৫০ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ হাজার ৪৭১ টাকা।
আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা
জ্যামাইকান ব্লু মাউন্টেন কফি
জ্যামাইকার বিখ্যাত নীল পাহাড়ে জন্মানো কফির জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঐশ্বর্য্যমন্ডিত কফি হচ্ছে এই ব্লু মাউন্টেন। এই অঞ্চলের উচ্চতা, জলবায়ু এবং মাটির সমন্বয় কফির ব্যতিক্রমী এবং পৃথিবী বিখ্যাত স্বাদে অবদান রাখে। প্রায় ৫ হাজার ফুট উপরে জন্মানো কফি চেরিগুলো সাবধানে হাতে বাছাই করা হয়। অন্যান্য কফি বীজের মত এগুলোতে হালকা তীক্ত স্বাদ নেই। আর এই ভিন্নতা বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে এদের প্রসিদ্ধি।
এই কফিটি টিয়া মারিয়া কফি লিকার তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এটি কফিটিকে শুধুমাত্র এক কাপ পানীয় থেকে নিয়ে গেছে অনেকটা দূরে, যা এর বহুমুখিতার পরিচায়ক।
জ্যামাইকান ব্লু মাউন্টেন কফি বিশ্বের সবচেয়ে বিলাসবহুল এবং সব থেকে কাঙ্ক্ষিত কফিগুলোর মধ্যে একটি। এর দাম প্রতি পাউন্ডে ১৪০ মার্কিন ডলার (১৫ হাজার ৩২০ বাংলাদেশি টাকা)।
আরও পড়ুন: গরমে শরীর সতেজ রাখতে আইস-টি
পরিশিষ্ট
বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই ১০টি কফি প্রমাণ করে যে, এই পানীয় এর যে কোনও প্রজন্মকে জয় করার শক্তি আছে। হোক সেটা অন্ধ কোনও গলি-ঘুপচির টঙের দোকানে বা চোখ ধাঁধানো আলোয় ভরা কোন পাঁচ-তারকা রেস্তোরাঁয়। কফি উৎসাহী হলেই প্রত্যেকে অকপটে আবিষ্কার করবে নিজেকে কফি কাপ হাতে। প্রতি চুমুকে স্বাদের আহ্বান ছাড়াও হাজারও আড্ডা ও সঞ্জীবনী শক্তির এক অনন্য রহস্যময়তার ধারক এই পানীয়। সেখানে এই কফিগুলোর সীমা ছাড়ানো দামের পরিধিতে বিচরণ করে অসংখ্য মানুষের জীবিকা। আর সেই অগণিত প্রথম চুমুকের শব্দ লুটায় যেন খেত থেকে লাখো লাখো কফি বীজ নিঙড়ানোর ইতিহাসের প্রতিধ্বনিতে।
আরও পড়ুন: কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
বিশ্বের সেরা ১০ মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত
প্রকৃতির মহিমা হৃদয়ে ধারণ করে অবলীলায় ঝরে চলেছে মনোরম জলপ্রপাত ও প্রাকৃতিক ঝর্ণাগুলো। কালের গহ্বরে শত শত সভ্যতা হারিয়ে গেলেও এগুলো এখনও বেঁচে আছে অকৃত্রিম কারুকাজে। বিশ্ব সংসারের এই প্রাণবন্ত জল-শিল্পগুলো যেন নিবেদিত হয়ে শিখিয়ে দেয় সৌন্দর্য্যের বুনন। পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ের সঙ্গে নমনীয়তার মায়াবী মেলবন্ধনে রচনা করে অস্তিত্বের জয়গান। সেই সঙ্গীতের সুরের সুধা পেতেই হাজারও পরিব্রাজক হন্যে হয়ে ঘর ছাড়ে। এই টান কোনও বিলাসিতার খোরাক নয়; বরং সৌন্দর্য্য, বিশালতা ও বিস্ময়কে নগণ্য দু’চোখ ভরে ধারণ করার এক অদম্য নেশার হাতছানি। তেমনি ১০টি নয়নাভিরাম ঝর্ণার বিস্তারিত নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, ডুব দেয়া যাক সেই জলজ মুগ্ধতার রাজ্যে।
পৃথিবীর ১০টি সর্বোচ্চ এবং সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক ঝর্ণা
অ্যাঞ্জেল জলপ্রপাত
এর অবস্থান ভেনেজুয়েলার কানাইমা ন্যাশনাল পার্কের লীলাভূমিতে। অয়ান-টেপুই পর্বতের কোলে সগৌরবে নিজের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে ৯৭৯ মিটার (৩ হাজার ২১২ ফুট)-এর এই দীর্ঘ পানির ধারা। স্থানীয় নাম কেরেপাকুপাই মেরু, যার অর্থ গভীরতম স্থানের জলপ্রপাত।
অ্যাঞ্জেল নামটি এসেছে বিমানচালক জিমি অ্যাঞ্জেলের নাম থেকে, যিনি ১৯৩৩ সালে গ্র্যান সাবানার উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় সর্বপ্রথম এই নির্ঝরকে আবিষ্কার করেন। ১৯৬০ সালের ২ জুলাই তার শেষকৃত্যের ভস্ম ফেলা হয় এই ঝর্ণায়।
আরও পড়ুন: ১৬০ দেশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়লেন নাজমুন নাহার
এটি বর্ষাকালে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ হাজার ৭৫০ গ্যালন বেগে প্রবাহিত হয়। বর্তমানে এটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত।
তুগেলা জলপ্রপাত
দক্ষিণ আফ্রিকার রয়্যাল ন্যাটাল ন্যাশনাল পার্কের কেন্দ্রস্থলে মুখোমুখি হওয়া যাবে এই জলপ্রপাতটির সঙ্গে। প্রাকৃতিক শৈল্পিকতার এই অনন্য নির্মাণের দৈর্ঘ্য ৯৪৮ মিটার (৩ হাজার ১১০ ফুট)। ড্রাকেন্সবার্গ পর্বতমালার কঠিন দেহ বেয়ে নেমে গেছে এই অপরূপ ধারার মন্ত্রমুগ্ধতা। পাঁচটি স্বতন্ত্র স্তরে বিভক্ত এই নির্ঝরের গন্তব্য তুগেলা নদী। এই নদীর উৎপত্তি মন্ট-অক্স-সোর্সেস পাহাড়ে। এই পাহাড়ের উপর এবং সেই রয়্যাল ন্যাটাল ন্যাশনাল পার্ক; এই দুইটি পথে রয়েছে তুগেলার দুটি ঝিরি পথ।
এই ঝর্ণার আবিষ্কার হয় ২০ শতকে ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের মাধ্যমে। ভেজা মৌসুমে প্রতি সেকেন্ডে ৫০ ঘনফুট (১ দশমিক ৪১ কিউবিক মিটার) পর্যন্ত উঠে যায় এর প্রবাহ।
গ্যালারি কসমসে শুরু হলো আর্টক্যাম্প ‘স্প্লেন্ডার্স অব বাংলাদেশ’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের স্মরণে গ্যালারি কসমস দুই দিনব্যাপী বিশেষ ওয়াটাকালার আর্ট ক্যাম্প আয়োজন করেছে। শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর কসমস সেন্টারে ‘স্প্লেন্ডার্স অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই আর্ট ক্যাম্পটি শুরু হয়েছে।
বৃষ্টিস্নাত দিনে সকাল ১০টায় শুরু হয় আর্ট ক্যাম্পটির আনুষ্ঠানিকতা।
এতে যোগ দেন-আব্দুল্লাহ আল বশির, আজমল হোসেন, কামরুজ্জোহা, সাদেক আহমেদ, শাহনূর মামুন ও সৌভি আক্তার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কসমস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এনায়েতউল্লাহ খান, ডিএমডি মাসুদ জামিল খান, গ্যালারি কসমসের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ও চিত্রশিল্পী সৌরভ চৌধুরী।
আর্টক্যাম্পটির তত্ত্বাবধানে থাকা সৌরভ চৌধুরী এই আয়োজন নিয়ে ইউএনবিকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে আমাদের এই আর্টক্যাম্পের আয়োজন। দুই দিনব্যাপী এই আর্টক্যাম্পে প্রথমদিন অংশগ্রহণকারীরা তাদের ক্যানভাসের বিষয় বঙ্গবন্ধু। দ্বিতীয় দিন আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলো আঁকবেন।’
আরও পড়ুন: উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হোম অফিস যেভাবে সাজাবেন
জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেল নাটোরের ‘কাঁচাগোল্লা’
দেশের ১৭ তম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি 'কাঁচাগোল্লা'।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঞাঁ জানান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প নকশা ও ট্রেড মার্ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রায় আড়াইশ' বছরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচাগোল্লার বিকৃতি ঠেকাতে এবং এর ভৌগলিক উদ্ভাবন স্থানের স্বীকৃতি চেয়ে চলতি বছরের ৩০ মার্চ মাসে আবেদন করেছিলো নাটোরের জেলা প্রশাসন।
বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে ১৭তম ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ছানার তৈরি নাটোরের কাঁচাগোল্লাকে।
আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে নাটোরের কাঁচাগোল্লা
জিআই স্বীকৃতি পেল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আম
জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর ফজলি আম
কিডনি পরিশোধনকারী ১০টি ভেষজ চা
কিডনি এমন এক প্রাকৃতিক ফিল্টার, যেটি অবিরাম রক্ত পরিশুদ্ধ করে ভারসাম্য বজায় রাখে মানবদেহে। এই স্বয়ংক্রিয় কার্যপ্রণালীতে কিঞ্চিত অসঙ্গতি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সামগ্রিক রেচনজনিত কার্যাবলীতে।সময়মতো চিকিৎসা না করা হলে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার দিকে অগ্রসর হয়। ভেষজ চা পান এই আশঙ্কা থেকে মুক্তির একটি প্রতিরোধমূলক উপায় হতে পারে। শুধুমাত্র নিয়ত জীবন ধারার একটি জনপ্রিয় অভ্যাসই নয়; পরিমিত চা পান সুস্থতায় সমৃদ্ধির পারিচালক। তাই কিডনি থেকে দূষিত পদার্থ নিগমনে সাহায্যকারী ১০টি ভেষজ চা-এর কার্যকারিতা নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, চা পানের অভ্যাস থেকে সর্বোচ্চ উপযোগিতা বের করে আনতে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
কিডনিকে সুস্থ রাখার ১০টি ভেষজ চা
ড্যান্ডেলিয়ন চা
এই চা-এর উৎস ড্যান্ডেলিয়ন নামক উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম Taraxacum officinale। গাছের পাতা, শিকড় এবং ফুল; প্রত্যেকটি অবদান রাখে এই চা উৎপাদনে।
এর পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে, ই এবং ফোলেট। মানবদেহে প্রয়োজনীয় খনিজের মধ্যে এটি আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামের যোগান দিতে পারে। এর শিকড়ে আছে প্রচুর পরিমাণে ইনুলিন, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে।
ড্যান্ডেলিয়নের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। রক্তে শর্করা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ড্যান্ডেলিয়ন চা বেশ কার্যকর।
ড্যান্ডেলিয়ন চা বানানোর জন্য এর পাতা বা শিকড় সংগ্রহ করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। পাতা থেকে চা বানাতে পাতাগুলো গরম পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর শিকড়ের বেলায় পিষে রস বের করে নিতে হয়।
আরও পড়ুন: রোজায় সুস্থ থাকার ৫টি উপায়
নেটল চা
নেটল চা-এর উদ্ভিদের নাম স্টিঙ্গিং নেটল (Stinging Nettle), যার বৈজ্ঞানিক নাম Urtica dioica।
এই গাছের পাতা চা তৈরির প্রধান উপাদান। এই পাতায় আছে ভিটামিন সি, ডি এবং কে। আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ উপাদানের পাশাপাশি আছে ফ্যাটি অ্যাসিড। এই চা পলিফেনল এবং ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস।
নেটল চায়ে থাকা যৌগ প্রদাহ কমাতে এবং আর্থ্রাইটিসের মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে। মূত্রনালীর সংক্রমণ উপশমে এটি বেশ সহায়ক। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য জয়েন্টের ব্যথা এবং পেশির খিঁচুনি থেকে মুক্তি দিতে পারে।
নেটল চা বানাতে হলে প্রথমে হাতে গ্লাভস পরে তাজা নেটল পাতা সংগ্রহ করতে হবে। পাতাগুলোকে গরম পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখার পরেই এটি চা হিসেবে পানের উপযোগী হয়ে ওঠে।
হিবিস্কাস চা
হিবিস্কাস চা-এর উদ্ভিদের নাম হিবিস্কাস; বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus sabdariffa। গাছের শুকনো ক্যালিস তথা ফুলের বাইরের অংশ থেকে চা তৈরি করা হয়। লাল রঙের এই চায়ে আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আয়রন ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ পদার্থ।
স্বতন্ত্র ট্যাঞ্জি গন্ধের জন্য সুপরিচিত এই চা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। এটি নিয়মিত সেবনে স্বল্প মাত্রার কোলেস্টেরল উন্নত হতে পারে। হিবিস্কাস চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো ফ্রি র্যাডিক্যাল এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়া এর হজমে সহায়তা করা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ক্ষমতা আছে।
হিবিস্কাস ক্যালিস সংগ্রহের পর শুকানোর পরে সেগুলো ৫-১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখলেই চা তৈরি হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: গরমে শরীর সতেজ রাখতে আইস-টি
পার্সলে চা
পার্সলে গাছের (বৈজ্ঞানিক নাম Petroselinum crispum) পাতা থেকে প্রাপ্ত পার্সলে চা প্রচুর পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যগুণ সম্পন্ন। অন্যান্য ভেষজ চায়ের থেকে ভিন্ন এই চা বেশ সুস্বাদু। ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ পার্সলে চা কিডনির কার্যকারিতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। এতে করে দেহ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি পায়।
পার্সলে চায়ে আছে মূত্রবর্ধক বৈশিষ্ট্য। এতে থাকা তেলের মতো উপাদানগুলোর কারণে প্রস্রাবের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এতে করে শরীরে থাকা টক্সিন বের হয়ে যায় এবং একই সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে যায়।
পার্সলে চায়ের উপকারিতা উপভোগ করতে গরম পানিতে এক মুঠো তাজা পার্সলে পাতা প্রায় ৫-১০ মিনিট জ্বাল দেওয়াই যথেষ্ট।
ক্র্যানবেরি চা
Vaccinium macrocarpon বৈজ্ঞানিক নামের ক্র্যানবেরি উদ্ভিদের ফল থেকে তৈরি হয় ক্র্যানবেরি চা। সুস্বাদু এই ফলটি অনেক স্বাস্থ্যগুণের আধার। এতে থাকা প্রাকৃতিক যৌগ প্রোঅ্যান্থোসায়ানিডিন্স মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
এই চায়ে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ফলে এটি শরীরকে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধক্ষম করে তোলে। মূত্রনালীর প্রদাহ এবং অস্বস্তি দূর করাতেও এই চা অপরিসীম ভূমিকা পালন করে।
ক্র্যানবেরি চা তৈরি করতে হলে প্রথমে পানি সিদ্ধ করে সামান্য ঠাণ্ডা করতে হবে। অতঃপর তা তাজা ক্র্যানবেরি ভর্তি কাপে ঢেলে ঢেকে রাখতে হবে। প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর তৈরি চা পানের উপযোগী হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: এই গরমে ট্যানিং এড়াতে কিছু টিপস
মানুষের পরে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ১০ প্রাণী
বিস্ময়কর সৃষ্টি জগতের স্পন্দনে মুখর প্রকৃতি অকপটে জানান দেয় জ্ঞানীয় ক্ষমতার দিক থেকে মানুষের সমকক্ষতার কথা। প্রাণের আশ্রয় এই নীল গ্রহের কিছু প্রাণীকুলের অদ্ভূত বুদ্ধিদ্বীপ্ততা পাল্লা দিয়ে চলে তাদের সহজাত প্রবৃত্তির সঙ্গে। সেখানে বিজ্ঞানের প্রখর বিশ্লেষণ অবাক বনে যায় তাদের জ্ঞানীয় ক্ষমতার কাছে প্রকৃতগত পাশবিকতাকে হার মেনে যেতে দেখে। আজকের নিবন্ধটি হাজির করতে চলেছে- মানুষের ব্যাতিত পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান ১০ প্রাণীকে। আপনার চিরচেনা প্রাণীটিকেও হয়ত এদের মধ্যে পেয়ে যেতে পারেন। চলুন, বুদ্ধিমত্তা প্রকাশের এক ভিন্ন দিগন্তে প্রবেশ করা যাক।
মানুষ বাদে বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ১০টি প্রাণী
ডলফিন
অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং উচ্চতর জ্ঞানীয় ক্ষমতার জন্য মানুষের পরেই সর্বাধিক পরিচিত প্রাণীটি হলো ডলফিন। বিশেষ করে বোটলনোজ ডলফিন সামাজিক কাঠামো গঠন, পারস্পরিক যোগাযোগ এবং সমস্যা সমাধান করতে পারে। এদের মস্তিষ্ক শরীরের তুলনায় বড় এবং এদের মস্তিষ্কের বিকশিত নিওকর্টেক্স অঞ্চলটি উচু স্তরের জ্ঞানীয় কার্য সম্পাদনে এদের সাহায্য করে।
ডলফিনের বুদ্ধিমত্তার একটি আকর্ষণীয় দিক হলো তাদের হাতিয়ার ব্যবহার। এই দক্ষতাটি যে তারা শুধু আত্মরক্ষায় ব্যবহার করে তা নয়; শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তারা এটি ছড়িয়ে দিতে পারে তাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
ডলফিনরা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাদের নানা ধরনের কণ্ঠস্বর এবং শারীরিক অঙ্গ-ভঙ্গি ব্যবহার করে যোগাযোগের দক্ষতা দিয়ে। প্রতিটি ডলফিনের স্বতন্ত্র স্বাক্ষর হুইসেল রয়েছে, যা অনেকটা নাম বা সম্বোধনের মতো কাজ করে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শীর্ষ ১৫টি ঐতিহ্যবাহী স্থান
বনমানুষ
শিম্পাঞ্জি, বোনোবোস, গরিলা এবং ওরাঙওটানের মত গ্রেট এপরা মানুষের নিকটতম আত্মীয়। এরা মানুষের মতোই সহানুভূতি, মনস্তত্ত্ব, হাতিয়ার ব্যবহার, যোগাযোগ এবং সুক্ষ্ম সমস্যা সমাধান করতে পারে। তাদেরকে যে বিষয়টি বিশেষত্ব দিয়েছে সেটি হচ্ছে- তাদের হাতিয়ার ব্যবহার করা এবং তা দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা।
এই বনমানুষেরা পরস্পরের আবেগ চিনতে ও বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক সাড়াও দিতে পারে। নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন তথ্য জানাতে তারা কণ্ঠস্বর, মুখের অভিব্যক্তি এবং শরীরের ভঙ্গিমা ব্যবহার করে। তারা অন্যান্য প্রাণী বিশেষ করে মানুষের সঙ্গে এই যোগাযোগটি রক্ষা করতে পারে।
বনমানুষের যুগান্তকারী বিকাশ হলো, তারা নতুন প্রতীক বা সাংকেতিক ভাষা শিখে নিতে পারে।
হাতি
স্থলজ প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মস্তিষ্ক হলো হাতির। তাদের প্রায় ২৫৭ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় তিনগুণ।
হাতির বুদ্ধিমত্তার একটি আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল তাদের মৃত সঙ্গীদের জন্য শোক করার ক্ষমতা। তারা মৃত পালের সদস্যের দেহ আলতো করে স্পর্শ করে বা আদর করে তাদের শান্তনা দেয়।
তারা হাতিয়ার ব্যবহার করে দূরের কোনো জিনিস তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আনতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে নতুন কিছু শিখে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
হাতিরা বয়স্ক সদস্যের নেতৃত্বে একক পরিবার গঠন করে নির্দিষ্ট জায়গায় জটলা হয়ে বসবাস করে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য অনেক দূর থেকে কম-ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ ব্যবহার করে।
আরও পড়ুন: পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের করণীয়
তিমি
অরকাস তিমি সামুদ্রিক প্রাণীদের মধ্যে সব থেকে বুদ্ধিমান এবং ভয়ঙ্কর শিকারী। ঘাতক তিমি নামে পরিচিত এই দৈত্যাকার প্রাণী সামাজিক কাঠামো গঠন করতে পারে। প্রতিটি একক পরিবার আলাদা ভাবে আঁটসাঁট হয়ে একত্রে থাকে।
অরকাসের আছে সমস্যা সমাধান, উন্নত যোগাযোগ এবং বৈচিত্র্যময় শিকারের কৌশল প্রদর্শনের ক্ষমতা। তাদের বৃহৎ মস্তিষ্ক এবং বিভিন্ন কণ্ঠস্বর তাদের উচ্চ স্তরের জ্ঞানীয় ক্ষমতার পরিচয় দেয়। তাদের স্বতন্ত্র আওয়াজ বা ডাকের জন্য তাদের রয়েছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা। তারা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করে এবং বিভিন্ন সময়ে জায়গা বদলের জন্য তারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়।
এই অতিকায় প্রাণীগুলো সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অক্টোপাস
বহু উপাঙ্গবিশিষ্ট অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অধিক বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করে অক্টোপাস। অক্টোপাসের একটি সুক্ষ্ম স্নায়ুতন্ত্র রয়েছে এবং প্রতি উপাঙ্গতে রয়েছে নিউরনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, যেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মস্তিষ্কের জটিল কাজগুলো সম্পাদন করে।
অক্টোপাস বুদ্ধিমত্তার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো- তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা। অক্টোপাস সুনিপুণভাবে হাতিয়ার ব্যবহার দেখে অনুকরণ করে শিখে নিতে পারে। এই ক্ষমতাটি তাদের বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায় যে, অক্টোপাস যে কোনো বন্দি দশা থেকে মুক্তি লাভের জন্য অদ্ভূত সব কৌশল অবলম্বন করে থাকে। মূলত তাদের অভূতপূর্ব অভিযোজন ক্ষমতাই এরকম নৈপুণ্য প্রকাশের জন্য দায়ী।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল গাড়ি
বিশ্বসেরা ১০ পিরামিড: চিরন্তন কিংবদন্তির খোঁজে
মানব সভ্যতার অবাক চাহনির সামনে সহস্রাব্দ ধরে দাঁড়িয়ে আছে অবিঃশ্বাস্য উচ্চতা এবং রহস্যময় কাঠামোর পিরামিডগুলো। সেই চাহনিতে কখনও ছিল মহাপরাক্রমশালী দেবতার জন্য প্রার্থনা, কখনও বা ছিল বহির্জাগতিক প্রাণীর জন্য ভয়।প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই স্থাপনাগুলো প্রাচীন সভ্যতার চাতুর্য এবং প্রকৌশল দক্ষতার প্রমাণ। চিরন্তন এই কিংবদন্তির প্রতিটি ধূলিকণায় নিরন্তর স্পন্দিত হচ্ছে চিত্তাকর্ষক সব গল্প। সেই গল্পের খোঁজে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটক ছুটে যায় সেই অকৃত্রিম আদিমের স্বাদ নিতে। তেমনি বিশ্বের ১০টি অনন্য পিরামিড নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের নিবন্ধ। চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এই অতিকায় সভ্যতার ব্যাপারে।
পৃথিবীর সেরা ১০টি পিরামিড
গিজার গ্রেট পিরামিড
মিশরের কায়রোর পশ্চিমে গিজা মালভূমিতে অবস্থিত এই পিরামিডের আরও একটি নাম খুফুর পিরামিড বা চিওপসের পিরামিড। গিজা পিরামিড কমপ্লেক্সের এই অংশটির মূল উচ্চতা ছিল প্রায় ৪৮১ ফুট। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় ও বাইরের আবরণে পাথর অপসারণের ফলে এর উচ্চতা নেমে এসেছে প্রায় ৪৫৪ ফুটে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকলে ভিসা ছাড়াই যেতে পারবেন যেসব দেশে
ঐতিহাসিকদের মতে এই গ্রেট পিরামিড পুরাতন রাজ্যের চতুর্থ রাজবংশের ফেরাউন খুফুর শাসনামলে তথা ২ হাজার ৬১৩ থেকে ২ হাজার ৪৯৪ খ্রিস্টপূর্বের সময়ে নির্মিত হয়েছিল। গিজা মালভূমিতে অবস্থিত ৩টি পিরামিডের মধ্যে এটি প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম। এটি মূলত ফারাও খুফুর পরিবার ও রাজকীয় কর্মকর্তাদের জন্য মন্দির ও সমাধি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে পিরামিডটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট মেমফিস এবং এর নেক্রোপলিসের অংশ।
খাফরের পিরামিড
মিশরের গিজা মালভূমিতে গ্রেট পিরামিডের নিকটেই সগর্বে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া এই পিরামিডের আরেক নাম শেফ্রেনের পিরামিড। ৭০৬ ফুটের ভিত্তির উপর প্রায় ৪৪৮ ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়ে থাকা এই স্থাপনাটির নির্মাণ হয়েছিল ফেরাউন খাফরের শাসনামলে। গ্রেড পিরামিডের ন্যায় এর নির্মাণকালটিও চতুর্থ রাজবংশের সময়। খাফরকে খুফুর উত্তরসূরি বলে মনে করা হয়।
পিরামিডটি মূলত খাফরের সমাধি হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। সমাধির নকশায় তার পূর্বসূরিদের পিরামিডের স্পষ্ট ছাপ দেখা যায়। পিরামিডের নিচের অংশটি পালিশ করা চুনাপাথরে আবদ্ধ। পিরামিড কমপ্লেক্সের বিশেষ আকর্ষণ হলো স্ফিংস। এটি হলো সিংহের দেহ এবং মানুষের মুখ সম্বলিত বিশাল এক মূর্তি। একে ফেরাউন খাফরের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করা হয়।
আরও পড়ুন: পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে পর্যটক ও ভ্রমণকারীদের করণীয়