ভ্রমণে ট্রেকিং, হাইকিং ও ক্যাম্পিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করা জরুরি। পাহাড়ের খাঁদ, ঝিরিপথ ও জঙ্গল ঘেরা আদিবাসীদের গ্রামগুলো বিচরণের সময় সবচেয়ে বেশি যে ঝুঁকি থাকে তা হচ্ছে বিষাক্ত সাপের উৎপাত। বিশেষ করে পাহাড়ি সাপের দংশনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তা গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতার কারণ হতে পারে। ভ্রমণের আনন্দকে শতভাগ আরামদায়ক ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে হলে সর্বাত্মকভাবে এই ধরনের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা আবশ্যক। তাই চলুন, ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে দূরে থাকার উপায়গুলো জেনে নেই।
ভ্রমণের সময় সাপের কামড় থেকে দূরে থাকতে করণীয়
গন্তব্যে সাপের আনাগোনা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া
প্রতিটি সফল ভ্রমণের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তার সুষ্ঠ পরিকল্পনা। গন্তব্য ঠিক করার মুহূর্তে ভ্রমণের যানবাহন, সেখানকার আবাসন, খাওয়া-দাওয়া যাবতীয় বিষয়ে বিশদ ধারণা নেওয়া হয়। এগুলোর সঙ্গে সাপ থেকে নিরাপত্তার দিকটাও অন্তর্ভূক্ত করা উচিৎ। যে অঞ্চলে যাওয়া হচ্ছে সেখানকার স্থানীয় সাপের প্রজাতির ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা প্রয়োজন। যেমন রাসেলস ভাইপার ও মনোক্লেড কোবরা সাধারণত গ্রামীণ অঞ্চলে বেশি থাকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায় সবুজ পিট ভাইপারের মতো প্রজাতি। এই সাপগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাতে সক্রিয় থাকে এবং ধানের খেত বা জলাবদ্ধ এলাকায় বসবাস করে। এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে বাংলাদেশ বন বিভাগ, স্থানীয় বন্যপ্রাণী সংস্থাসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্র-পত্রিকার ওয়েবসাইটগুলোতে।
আরও পড়ুন: বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার চেনার উপায় ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা
সাপ প্রতিরোধী পরিধেয়
লম্বা প্যান্ট, মোটা মোজা ও উঁচু বুটের মতো পরিধেয়গুলো সাপের কামড়ের ঝুঁকি কমাতে পারে। দুর্গম অঞ্চল পেরিয়ে ঝর্ণা দেখার সময় বা ম্যানগ্রোভ বন ভ্রমণকালে সুরক্ষামূলক গিয়ার পরিধান করা অপরিহার্য। এছাড়া এখন স্নেক গেটারের মতো নানা ধরনের অত্যাধুনিক সেফটি গিয়ার পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন বিষাক্ত কীট-পতঙ্গ ও সাপের আক্রমণের বিরুদ্ধে মজবুত ঢালের কাজ করে।
পাশাপাশি পরনে হালকা রঙের পোশাক থাকলে তা সাপ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক হতে পারে। কেননা বৈশিষ্ট্যগতভাবে সাপ উজ্জল রঙিন বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট হয়। বাংলাদেশে ট্রেকিং, ক্যাম্পিং ও হাইকিং জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় বর্তমানে বিভাগীয় শহরগুলোতে অনেক ট্রাভেল শপ আছে। এই খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ট্রাভেল সরঞ্জামের পাশাপাশি বেশ কিছু স্নেক-সেফটি গিয়ারও পাওয়া যায়।
প্রাথমিক চিকিৎসা প্রস্তুতি
সাপের কামড় থেকে বাঁচার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে কামড়ের লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে হয় এবং অবিলম্বে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য করণীয়গুলো জানা থাকা জরুরি। দংশনের পর শরীরজুড়ে বিষের বিস্তার কমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং আক্রান্ত অঙ্গটিকে যথাসম্ভব স্থির রাখতে হবে। ব্যান্ডেজ, অ্যান্টিসেপটিক এবং সম্ভব হলে সাকশন ডিভাইস ধারণকারী স্নেক বাইট কিট সঙ্গে রাখা উত্তম। রাঙ্গামাটি বা খাগড়াছড়ির পার্বত্য অঞ্চলের মতো এলাকায় পেশাদার চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছতে কয়েক ঘণ্টা লেগে যায়। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক উপযুক্ত প্রাথমিক চিকিৎসা যথেষ্ট সাহায্যে আসতে পারে।
নিরাপদ ট্রেইল অনুসরণ করা
জনপ্রিয় পর্যটন এলাকাগুলোতে যেখানে অধিক লোক সমাগম হয় সেখানে ভ্রমণের সুবিধার্তে ঝুঁকিমুক্ত পথের নির্দেশনা দেওয়া থাকে। এই পথগুলো সাধারণত নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এরকম নির্দেশনা উল্লেখ করা সাইনবোর্ডগুলো একই সঙ্গে নিরাপদ ও সহজ ভ্রমণের নিশ্চয়তা দান করে। কোথাও হয়ত ঝোপঝাড় এতটা ঘন হয়ে গেছে যে তা বিচরণের অযোগ্য।
কোথাও বা খাড়া পিচ্ছিল ঢাল কিংবা স্বাভাবিক রাস্তা হলেও পথের প্রান্তে হয়ত রাস্তা শেষ বা অন্য কোনো রাস্তার সঙ্গে যোগসাজশ নেই। এ ধরনের রাস্তাগুলোতে প্রায়ই সাবধানতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া থাকে। অতিরিক্ত রোমাঞ্চের আশায় এগুলো উপেক্ষা করা মানেই ভয়াবহ বিপদের মুখে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ানো। এই উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সাপগুলো অধিক সক্রিয় থাকে এবং এদেরকে শনাক্ত করাও বেশ কঠিন হতে পারে।
আরও পড়ুন: রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা