ভিনিসিউস জুনিয়র ব্যালন দ’র না জেতার খবরে ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ডের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে সম্প্রতি ফ্রান্স ফুটবলের অনুষ্ঠানই বর্জন করে রিয়াল মাদ্রিদ। অথচ সেই ভিনিসিউসকেই নাকি বিক্রি করে দিতে ক্লাবের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপের মুখে পড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস।
ব্যালন দ’র না পেলেও তার পর থেকে দারুণভাবে জ্বলে ওঠা ভিনিসিউসকে নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের এমন খবর সত্যিই বোমা ফাটানোর মতো।
চলতি মৌসুমে রিয়ালের আক্রমণভাগের দুঃসময়ের মাঝেও প্রতিটি ম্যাচে নিজের উপস্থিতির জানান দিয়ে চলেছেন ২৪ বছর বয়সী এই উইঙ্গার। লা লিগায় ১২ ম্যাচে ৮ গোল ও চার অ্যাসিস্ট করে এখন পর্যন্ত রিয়ালের সবচেয়ে সফল স্ট্রাইকার তিনিই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও চার ম্যাচে চারটি গোলের দেখা পেয়েছেন এই ফরোয়ার্ড।
লেফট উইংয়ে তার চেয়ে ক্ষিপ্র গতির আক্রমণাত্মক ফুটবলার বর্তমানে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। সমালোচকদের চোখেও তিনি ইউরোপের এ সময়ের সেরা উইঙ্গার এবং সেরা ফুটবলারদের একজন। অথচ সেই ভিনিসিউসকেই নাকি ছেড়ে দিতে চান রিয়ালের পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা।
আরও পড়ুন: ভিনিসিউসের জন্য সৌদির ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব ফেরাল রিয়াল
গত গ্রীষ্মে সৌদি আরব থেকে বিরাট অঙ্কের অর্থিক প্রস্তাব পেয়েছিলেন ভিনিসিউস। পাঁচ বছরের চুক্তিতে এই ফুটবলারকে এক বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (পিআইএফ) কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ভিনিকে ২০৩৪ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের দূত হওয়ারও একটি বিশেষ প্রস্তাব রাখা হয়েছিল চুক্তিতে।
এমনকি রিলিজ ক্লস হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫০০ মিলিয়ন ইউরো দেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে সৌদি থেকে আসা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ভিনিসিউস জানিয়েছিলেন, রিয়ালেই আজীবন থাকতে চান তিনি।
অথচ মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে পাল্টে গেছে ক্লাবের অভ্যন্তরীণ চিত্র। রিয়ালের আর্থিক অবস্থায় ভারসাম্য আনতে ভিনিসিউসকে নাকি তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চান ক্লাবটির কর্তারা।
আরও পড়ুন: আক্রমণভাগে পরিবর্তন আসায় দলে ভারসাম্যের অভাব দেখছেন আনচেলত্তি
সূত্রের বরাত দিয়ে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্তের খবরে বলা হয়েছে, ভিনিসিউসকে ছেড়ে দিতে ক্লাব সভাপতি পেরেসকে চাপ দিয়ে আসছে তার উপদেষ্টা পরিষদ। এবার এ বিষয়ে সরব হয়েছেন তার ছেলে চিভোও।
রিয়াল মাদ্রিদে পেরেসের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং তার ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার চিভোর দাবি, রিয়াল মাদ্রিদ যে আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যে আছে, ভিনিসিউসকে বিক্রি করে দিলে তার সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া ভিনি সরে গেলে তার জায়গায় কিলিয়ান এমবাপে খেললে দলের আক্রমণভাগের সমস্যাও মিটে যাবে।
সৌদি আরবের প্রস্তাব পেয়ে ভিনিসিউসের এজেন্ট সেসময় জানিয়েছিলেন, মাদ্রিদে সুখে থাকলেও এই ধরনের বিরাট অঙ্কের প্রস্তাব অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিৎ।
রিয়ালের সঙ্গে ভিসিসিউসের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত। ফলে নতুন চুক্তির ব্যাপারে ভিনির এজেন্টের সঙ্গে আলোচনার সময় এগিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্লাব কর্তাদের এহেন সিদ্ধান্তে রিয়ালে ভিনিসিউসের ভবিষ্যত যে খানিকটা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
তবে বিষয়টি আলোর মুখ দেখতে এখনও অনেক দেরি। আবার ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকাকালে ইউরোপীয় ফুটবল ছেড়ে ভিনিসিউস সৌদি আরবে যাবেন কিনা, সেটিও দেখার বিষয়। তবে পিআইএফ যদি ভিনিসিউসকে পাওয়ার আশা না ছাড়ে, আর নতুন চুক্তিতে বেতন-বোনাস নিয়ে রিয়ালের সঙ্গে ভিনিসিউস যদি ঐক্যমত্যে না পৌঁছাতে পারেন, তাহলে তিনি রোনালদো-নেইমার-বেনজেমাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।