মৌসুমের শেষে এসে লা লিগার শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকতে প্রতিটি ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই রিয়াল মাদ্রিদের। অপরদিকে, আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা নিশ্চিত করতে একই লক্ষ্য আথলেতিক বিলবাওয়ের সামনেও। এমন সমীকরণ নিয়ে মাঠে নেমেছিল দুদল। তবে পুরো ম্যাচ নিজেদের কৌশলে খেলে সফল হলেও শেষে গিয়ে আর পেরে ওঠেনি বিলবাও। ফলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছেড়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা।

রবিবার রাতে সান্তিয়াগো বের্নাবেউতে লা লিগার ৩২তম রাউন্ডের ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে দুদলের কেউ গোল করতে না পারলেও যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে দুর্দান্ত এক শটে ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেন মাদ্রিদ জায়ান্টদের উরুগুয়ে মিডফিল্ডার ফেদেরিকো ভালভের্দে।

রিয়াল মাদ্রিদের ডেরায় গত ২০ বছর ধরে জয়বঞ্চিত বাস্ক কান্ট্রির দলটি। সেই ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে সবশেষ বের্নাবেউতে জয় পেয়েছিল বিলবাও। তারপর ১৯ ম্যাচ খেলে তিন ড্রয়ে মাত্র তিন পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছে দলটি, বাকি ১৬ ম্যাচেই হার। রবিবার এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭টিতে।

এদিন ৩১ ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে থেকে ম্যাচ শুরু করে বিলবাও। আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লা লিগা থেকে পাঁচটি দল অংশগ্রহণ করার সুযোগ তৈরি হলেও পরের দলগুলোর সঙ্গে ব্যবধান পয়েন্ট বেশি না থাকায় বাকি ম্যাচগুলোতে জয় আবশ্যক এর্নেস্তো ভালভের্দের শিষ্যদের।

আরও পড়ুন: ফিরে আসা কাকে বলে, দেখিয়ে দিল বার্সেলোনা

সমান ম্যাচে ৫২ পয়েন্ট নিয়ে ভিয়ারিয়াল রয়েছে পাঁচে এবং ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে রিয়াল বেতিস রয়েছে ছয়ে। তাই বাকি ম্যাচগুলোতে পা হড়কালে এই দুই দল বিলবাওকে পেছনে ফেলে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিতে পারে।

ফলে এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাদ্রিদে এসেছিল বিলবাও। তবে রিয়ালের আক্রমণের তোড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘প্ল্যান বি’ বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে দেখা যায় দলটির খেলোয়াড়দের।

রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে লো-ব্লক ডিফেন্স শুরু করে তারা। পুরো ম্যাচে মাত্র ২৭ শতাংশ সময় পজেশন ধরে রাখতে সক্ষম হয় দলটি। এর মধ্যে দ্বিতীয়ার্ধে কেবল একটি শট লক্ষ্যে রাখলেও প্রথমার্ধে তা-ও নিতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে, ৭৩ শতাংশ সময় বলের ওপর দখল রেখে ম্যাচজুড়ে মোট ২২টি শট নেয় রিয়াল মাদ্রিদ, যার ১৭টিই ছিল দ্বিতীয়ার্ধে।

এমন আক্রমণের মুখেও খুব ভালোভাবেই রক্ষণ সামলাচ্ছিল বিলবাও। নির্ধারিত নব্বই মিনিট রিয়াল মাদ্রিদকে তারা আটকে রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু যোগ করা সাত মিনিটের তৃতীয় মিনিটে জটলার বাইরে থেকে এমন এক বুলেট শট নেন ভালভের্দে, যা আটকানো শুধু উনাই সিমোন কেন, ফুটবল ইতিহাসের বাঘা বাঘা গোলরক্ষকদের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব।

ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে খানিকটা ডানদিক থেকে পায়ের পাতা দিয়ে বাঁ পাশের পোস্টে জোরালো শট নেন ২৬ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। বল বাইরের দিক দিয়ে বাঁক নিয়ে ক্রসবার ঘেঁষে জালে জড়িয়ে যায়। ফলে গোলপোস্টের সামনে সতর্ক থেকে লাফিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেও বল তার নাগালের বাইরে দিয়ে জালে আছড়ে পড়ে।

ম্যাচটি হেরে বসলে বার্সেলোনার সঙ্গে রিয়ালের পয়েন্ট ব্যবধান হয়ে যেত ৭, ড্র করলেও তা গিয়ে দাঁড়াত ছয়ে। ফলে লিগের ছয় ম্যাচ বাকি থাকতে শিরোপার দৌড় থেকেই একপ্রকার ছিটকে যেত কার্লো আনচলত্তির শিষ্যরা। আবশ্যিক এই জয়ে লড়াইটা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বার্সেলোনার ওপরও চাপ ধরে রাখল মাদ্রিদিস্তারা।

আরও পড়ুন: ব্যাপক তোড়জোড় করেও হেরে গেল রিয়াল, সেমিফাইনালে আর্সেনাল

৩২ ম্যাচে ২১ জয় ও ৬ ড্রয়ে ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। সমান ম্যাচে ৭৩ পয়েন্ট নিয়ে সবার উপরে বার্সেলোনা।

এর আগে, দিনের অপর ম্যাচে টেবিলের তলানির দিকের দল লাস পালমাসের কাছে হেরে গেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। এই ম্যাচের আগপর্যন্ত সামনে এল ক্লাসিকো থাকায় ম্যাচটি ড্র হওয়ার আশায় আতলেতিকোর শিরোপাস্বপ্ন নিভু নিভু করে হলেও জ্বলছিল। তবে দলটির আশার সেই বাতি এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দিয়েছে লাস পালমাস।

৩২ ম্যাচে তিনে থাকা আতলেতিকোর পয়েন্ট ৬৩, টেবিলের চূড়ায় থাকা বার্সার চেয়ে ১০ পয়েন্ট পেছনে। আর রিয়ালের কাছে হেরে সমান ম্যাচে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে চারেই রয়েছে বিলবাও। ৫২ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে থাকা ভিয়ারিয়াল মাঠে নামবে বুধবার রাতে। এক ম্যাচ কম খেলা দলটির সেদিনের প্রতিপক্ষ সেল্তা ভিগো। ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে থাকা রিয়াল বেতিস আগামীকাল খেলবে জিরোনার বিপক্ষে।

আগামী মাসের ৬ তারিখে বার্সার মাঠে লা লিগায় মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকো। রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপাজয়ের সম্ভাবনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চলেছে ওই ম্যাচটি। তার আগে অবশ্য আগামী শনিবার কোপা দেল রের ফাইনালে আরও একবার মাঠে নামছে ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।

আরও পড়ুন: গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লেভানডোভস্কির চোট, বিপদে বার্সেলোনা