শিম শীতকালীন সবজি হলেও বেশ কয়েক বছর থেকে গ্রীষ্মে এ সবজি চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। যশোরের চৌগাছায় এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। শীত মৌসুম শুরুর দিকে উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে শিমের দাম বেশি থাকে। বেশি দামে শিম বিক্রিয় আশায় যশোরের চৌগাছার চাষিরা গ্রীষ্মকালীন শিম চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
এরমধ্যে অধিকাংশ জমির প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে শিম বিক্রি করে চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলে আশায় বুক বেঁধেছেন।
শীত মৌসুম শুরুর আগে ভাগেই কৃষকরা খেত প্রস্তুত করে শিমের বীজ বপন করেন। পুরো শীতে শিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তারা। শীতের শিম এখন চাষ হচ্ছে গরমেও। নতুন চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। শিমে অন্যান্য সবজির মত ভাইরাস নেই বললেই চলে। সব ধরনের মাটিতেই শিমের চাষ হয়। বাজারে শিমের চাহিদা ভালো, দামও বেশি পাওয়া যায়। তাই গ্রীষ্মের শিম চাষে ঝুঁকছেন এ জনপদের চাষিরা।
আরও পড়ুন: সবজিতে সবুজ দিগন্ত!
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চৌগাছাতে এবারের গ্রীষ্ম মৌসুমে ১৮০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। রুপবান ও ইসপা-২ জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে।
উপজেলার সিংহঝুলী, ফুলসারা, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ইউনিয়নে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাষিরা গ্রীষ্মের শিম অত্যন্ত যত্ন সহকারে মাচায় চাষ করেছেন। অধিকাংশ জমির শিমে ইতোমধ্যে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আর সপ্তাহ দুয়েক পরেই কৃষক তার পরিশ্রমের ফল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
পেটভরা গ্রামের শিম চাষি মোসত বিশ্বাস বলেন, ‘শিম মূলত শীতের সবজি, কিন্তু গ্রীষ্মেও এর চাষ হচ্ছে ,ফলনও আশানুরুপ। তাই আগাম শিম চাষ করছি।’
আরও পড়ুন: ভাসমান সবজি চাষে সাবলম্বী খুলনার ভূমিহীন কৃষকরা
চলতি মৌসুমে তিনি ১ বিঘা জমিতে রুপবান জাতের শিমের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তার প্রায় ১০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে মনে করছেন মোস্ত বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মের শিম চাষে পোকা মাকড়ের উপদ্রুপ কিছুটা বেশি থাকে, তবে নিয়মিত জমি পরিচর্যা করলে পোকায় শিম বেশি ক্ষতি করতে পারে না। নিয়মিত সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলে শীতের মতই শিম গাছের বৃদ্ধি খুবই ভালো থাকে।’
কৃষক মোস্ত বিশ্বাসের মত কৃষক আব্দুল খালেক, শরিফুল ইসলাম, হাবিবুল্লাহ এক বিঘা করে ও সাইফ দুই বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন।
উপজেলার ফুলসারা ও সিংহঝুলী ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের চাষিরা তুলনামূলক নিচু জমিতে গ্রীষ্মের শিম চাষ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে বন্যার ক্ষতি পোষাতে আগাম সবজি চাষ
কৃষকরা জানান, যে সব জমিতে বছরের বেশির ভাগ সময় পানি জমে থাকে সেই জমিতে শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। গত সাত বছর ধরে কৃষকরা নিচু জমিতে উঁচু বেড তৈরি করে সেই বেডে শিমের বীজ রোপন করেন। একাধারে বৃষ্টিপাত হলেও এসব জমির শিম নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সমরেন বিশ্বাস জানান, নতুন নতুন ফসল উৎপাদনে চৌগাছার কৃষকেরা বেশ পারদর্শী। অনেক আগে থেকেই এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের শিম চাষ হচ্ছে। কৃষকরা যাতে এ সব ফসল উৎপাদনে কোন সমস্যায় না পড়েন তার জন্য কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে।