প্রচন্ড তাপপ্রবাহে ধুকছে খুলনা অঞ্চল। গত ১২ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে খুলনা বিভাগে। আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এই অঞ্চলেই। আর এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে আরও চার থেকে পাঁচদিন। এ সময়ে বাড়তে পারে তাপমাত্রা। আর এরপরই সম্ভাবনা রয়েছে বৃষ্টির। এমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এদিকে, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। এ অবস্থায় জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অসহ্য গরমে নাজেহাল হয়ে পড়েছে জীব-বৈচিত্র্য অস্থির হয়ে উঠেছে। রোদের উত্তাপে বাইরে বের হলেই চোখ যেন পুড়ে যাচ্ছে। ছুটে চলা কর্মব্যস্ত নগরবাসী, পথচারী, বিভিন্ন গাড়ির চালকেরা, পেশাজীবী, নিম্ন আয়ের দিনমজুর, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অনেক পোষ্য প্রাণী গরম সইতে না পেরে আশপাশের ড্রেন বা জলাশয়ে নেমে পড়েছে। স্থানীয় এলাকার ছোট ছোট বাচ্চারা পানিতে ঝাপ দিচ্ছে শরীরকে শীতল করতে। তীব্র গরমের কারণে নগরীর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিগত বাসা-বাড়িতে বিরতিহীনভাবে চলছে এসি, এয়ারকুলার, ফ্যান। সারাদিন রোদের উত্তাপে পড়ে রোজাদারসহ পথচারীরা দেহের তৃষ্ণা মেটাতে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে কিনছেন ঠাণ্ডা আাখের রস, লেবু, বেলের শরবত, ডাবসহ ঠাণ্ডা পানীয়।
খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী সড়কে কাজ করা দিনমজুর খোরশেদ আলম বলেন, প্রচণ্ড গরম পড়েছে। রমজানের শুরুতে গরম কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে অনেক গরম। গরমে সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে। পানি পিপাসা লাগে, শরীর দুর্বল হয়ে যায়। রোজা রেখে কাজ করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রোদের প্রচণ্ড তাপে বেশি সময় দাঁড়ানো যায় না। তবুও কাজ করতে হয়। এদিকে রাস্তার কাজ চলায় ধুলাবালি উড়ে আসছে। সবমিলিয়ে অস্বস্তি লাগছে।
আরও পড়ুন: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ঢাকার বাতাসের মান 'অস্বাস্থ্যকর'
নগরীর শিববাড়ি পাবলিক হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সাচালক মকবুল হোসেন বলেন, গরমে অবস্থা খুব খারাপ। রিক্সা চালাতে গিয়ে ঘেমে গোসল দিয়ে উঠছি। রোদের তাপে মাথা যন্ত্রণা করে। ক্লান্ত হয়ে পড়ছি; বেশিক্ষণ রিক্সা চালানো যায় না। বিশেষ করে দুপুরে খুব বেশি গরম লাগে। রোদে পুড়ে যায়। তাই ভাড়া টানার পর ছায়াতে কিছু সময় জিরিয়ে নিতে হয়।
খালিশপুর পার্কের মোড়ের বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ সবুজ বলেন, আজ রোদের তাপ অনেক বেশি। বাইরে বের হলে রোদে গা জ্বলে যাচ্ছে। দিনে-রাতে কয়েকবার গোসল করছি। আর খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছে না। এছাড়া ঘরে ফ্যান চালিয়ে রাখতে হচ্ছে সারাক্ষণ।
ব্যবসায়ী হামিম জানান, গরমে কোথাও শান্তি মিলছে না। বেজায় গরমে বাইরে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে। কি আর করার ব্যবসার কাজে তো বাইরে যেতেই হবে। তবে বাইরে গেলে রোদে মনে হচ্ছে গায়ে কে যেন আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কেউ, এমনই গরম।
সিএনজি চালক মিজানুর রহমান জানান, গরমে গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব গরম, শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে। শরীরে দরদর করে ঘাম ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু উপায় নেই কি করব গাড়ি তো চালাতেই তবে। কারণ প্রতিদিনের সংসার খরচ, আর আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে পরিবারের জন্য কেনাকাটার জন্য গরম আর গায়ে গরম মনে হচ্ছে না।
আখের রস বিক্রেতা সুমন জানান, প্রায় সব সময়ই আখের শরবত বিক্রি করি। তবে কয়েকদিন ধরে যে অসহনীয় গরম পড়ছে তাতে আখের রসের চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে ক্রেতাদের দারুণ সাড়া মিলছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খুলনায় আজকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলায়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আজকেও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া যশোরে ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মোংলায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুষ্টিয়ায় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে।
তিনি বলেন, তাপমাত্রা আরও চার থেকে পাঁচ দিন অব্যাহত থাকবে। কিছুটা বাড়তে পারে। তবে আগামী ১৭ এপ্রিলের পর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দু-এক জায়গায় কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) সূত্রে জানা যায়, ১১ দিনের ব্যবধানে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। গত ৩১ মার্চ পিক আওয়ারে ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের বিদ্যুৎতের চাহিদা ছিল এক হাজার ৬১৮ মেগাওয়াট। আর সবশেষ ১১ এপ্রিল বিদ্যুতের চাহিদা ছিল দুই হাজার ২৯৮ মেগাওয়াট। ১১ দিনের ব্যবধানে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে ৬৮০ মেগাওয়াট।
ওজোপাডিকোর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শহিদুল আলম বলেন, মার্চের চেয়ে এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তবে চাহিদা বাড়লেও আমাদের সরবরাহ ঠিক আছে। বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। এদিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ।
আরও পড়ুন: আগামী ৭ দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তর