আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি) রবিবার এক বিবৃতিতে এই অঞ্চলের সমস্ত অভিন্ন নদী থেকে নিরবচ্ছিন্ন জলপ্রবাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে যে কোনো আসন্ন পরিবেশগত বিপর্যয় এড়াতে সকল অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ অপরিহার্য।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের কুশিয়ারা নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর জনগণের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের কোনো ইঙ্গিত না থাকলেও হঠাৎ করেই কুশিয়ারাকে সামনে আনা হয়েছে।
আইএফসি বলেছে, শুষ্ক মৌসুমে অভিন্ন নদীর পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার সুস্পষ্ট পদক্ষেপ দৃশ্যমান। ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে ৫২টি নদীর পানির প্রবাহ ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
লীন মৌসুমে এখন শুধুমাত্র ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীতে পানির প্রবাহ পাওয়া যায়, সেগুলো বা তাদের উপনদীর উজানে অসংখ্য ব্যারেজ থাকা সত্ত্বেও। কুশিয়ারা ও সুরমা বরাক নদীর শাখা নদী, যা ভারত সীমান্তের কাছে দুই ভাগে ভাগ হয়েছে।
ইতোমধ্যে আসামের ফুলেরতলে বরাকের ওপর একটি ব্যারেজ নির্মাণ করে ১০ হাজার কিউসেক পানি প্রত্যাহার করেছে। কুশিয়ারা ও সুরমার পানি প্রত্যাহারে মেঘনা ও সিলেটের হাওরগুলো শুকিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বিহারে বন্যা সামাল দিতে ফারাক্কার সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত
উল্লেখ্য, ফারাক্কা ব্যারাজ চালু হওয়ার পর থেকে গঙ্গার বার্ষিক জলপ্রবাহ ৫০০ বিলিয়ন বিসিএম থেকে ৫০ বিলিয়ন বিসিএমে নেমে এসেছে।
এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
সুপেয় পানির প্রবাহের অভাবে ইউনেস্কো বলেছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পানিতে অত্যধিক লবণাক্ততার জন্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সাগর থেকে দেশের গভীরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট পর্যন্ত লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে।
তিস্তা চুক্তি এখনও নিশ্চয়তার পর্যায়ে রয়েছে-পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে আইএফসি আরও বলেছে, প্রায় দুই দশক ধরে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ব্যারাজ থেকে পুরো তিস্তার পানি প্রত্যাহার করা হচ্ছে।
আইএফসি বলেছে, দেশের অন্যতম প্রধান এই নদীর পানি প্রবাহের অভাবে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল মরুকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
একসময় যে গোমতিকে কুমিল্লার দুঃখ বলা হতো, এখন বর্ষা মৌসুমেও সে নদীতে পানি থাকে না।
আরও পড়ুন: ফারাক্কার প্রভাবে ভাঙছে নবগঙ্গা-মধুমতি
এতে বলা হয়েছে, সহস্রাব্দ বছর ধরে অভিন্ন নদী দ্বারা সৃষ্ট বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে, কেননা এটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নদীমাতৃক এ দেশের পরিবেশ, বাস্তুসংস্থান, বাস্তুতন্ত্র, জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আইএফসি বলেছে, মানবসৃষ্ট কারণে সৃষ্ট পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে দেশকে বাঁচাতে অভিন্ন নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- আইএফসির চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সালু, মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান, আইএফসি নিউইয়র্ক শাখার সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমদ,
সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. এসআই খান, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী এবং আইএফসি বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও আইএফসি সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল মজুমদার।