অর্থ মন্ত্রণালয়ের ছাড় না পাওয়ায় আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার ঝুলছে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।
বুধবার নির্বাচন ভবনে ১৬তম কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য জানান।
সরকার প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রকল্প প্রস্তাব স্থগিত রাখার পর সরকার এখন পুরনো ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য অর্থ ছাড় করতে বিলম্ব করছে।
তিনি বলেন, ‘ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) জানিয়েছে যে আমাদের কাছে এক লাখ ইভিএম রয়েছে, যা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে আমরা সংসদ নির্বাচনে মেরামত এবং ব্যবহারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমরা ইভিএম ব্যবহার করা আসন সংখ্যা চূড়ান্ত করতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছে প্রতিটি দুই লাখ ৩৫ হাজার টাকায়, যা ভারতের তুলনায় প্রায় ১১ গুণ বেশি।
বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এর একটি প্রস্তাব অনুসারে, এখন, প্রায় পাঁচ বছর পরে, এই মেশিনগুলোর মধ্যে ৪০ হাজার মেরামতের বাইরে রয়েছে এবং বাকি এক লাখ এক হাজার ঠিক করা যেতে পারে। তবে এর জন্য প্রায় এক হজার ২৬০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অর্থ ছাড় করতে ইসি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে। অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা দিতে রাজি হলে পরবর্তী ধাপে ইসি বলতে পারবে কয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন: রংপুরে সংরক্ষিত ইভিএমের ৬০ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, যতটা সম্ভব ব্যবহারের কথা ভাবছেন তারা।
তিনি আরও বলেন, ‘স্থান ভেদে ভোটার সংখ্যা ভিন্ন। তাই ছোট এলাকা নিতে পারলে বেশি ইভিএম ব্যবহার হবে আর বড় এলাকায় হলে কম হবে। তাই চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর স্পষ্ট করে বলতে পারব।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কমিশন বরাবরই বলে আসছে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে তারা।
তিনি আরও বলেন,‘আমরা এর থেকে সরে আসিনি। যেখানে ইভিএম ব্যবহার করা হবে তার সংখ্যা নির্ভর করবে ইভিএম মেশিনের সংখ্যার উপর। এটি নির্ভর করে কতগুলো মেশিন পাওয়া যায়, কতগুলিকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলা যায়।’
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে তৎকালীন কে এম নুরুল হুদা কমিশন দুই লাখ ইভিএম মেশিন কিনেছিল। সে সময় তারা জাতীয় নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করেছিল। বাকিগুলো স্থানীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যবহৃত হয়। কিছু মেশিন বিএমটিএফ গুদামে সংরক্ষিত আছে। মোট এক লাখ মেশিন অকেজো হয়ে পড়েছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নেন। এর জন্য প্রায় চার লাখ মেশিনের প্রয়োজন। আরও দুই লাখ মেশিন ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারকে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার নতুন প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রকল্প প্রস্তাব স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আরও পড়ুন: ইভিএম কেনার বিষয়টি স্থগিত করা হয়েছে, বাতিল হয়নি: ইসি সচিব