বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং তারপর লিটারে মাত্র ৫ টাকা কমানো হল অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
তিনি বলেন, মধ্যরাতে হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা কমানো প্রতারণা।
তিনি আরও বলেন, দক্ষতার অভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘ইআরএফ ডায়ালগ-এ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা বৈদেশিক লেনদেনে নয়, বরং দেশীয় আর্থিক খাতের দুর্বলতা।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মন্দা ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রসারিত হতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে এর বিরূপ প্রভাব কমানো যেতে পারে।
তিনি অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে চারটি বিচ্যুতিও চিহ্নিত করেছেন, যা বাংলাদেশে অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
এই বিচ্যুতিগুলো হলো- বেসরকারি খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না পাওয়া, রাজস্ব উৎপাদনে দুর্বলতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিতে বৈষম্য।
তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি এখন সরকারি বিনিয়োগ দ্বারা চালিত হচ্ছে কারণ জিডিপিতে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের অনুপাত কয়েক বছর ধরে বাড়েনি এবং এখনও জিডিপির ২৩ থেকে ২৪ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে।
আরও পড়ুন: জাতিসংঘের সিডিপিতে পুনর্নিযুক্ত হলেন ড.দেবপ্রিয়
অন্যদিকে, জিডিপিতে সরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৫ থেকে ৬ শতাংশ থেকে ৭ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ হয়নি কারণ এফডিআই এখনও জিডিপির এক শতাংশের নিচে যা একটি গতিশীল অর্থনীতির জন্য যথেষ্ট নয়’।
গত ১০ বছরে গড়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা উল্লেখ করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে আয় বাড়ছে। ‘তাহলে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায় হচ্ছে না কেন... হিসেব-নিকেশে কোনো গরমিল আছে কি?’
তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন, রাজস্ব আহরণ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় সরকার খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারছে না, পাশাপাশি খাদ্য সহায়তার আওতা বাড়ানোও সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার শুল্ক ও মাসুল কমাতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার জন্য তারা রাজস্ব সংগ্রহের জন্য পরোক্ষ করের ওপর প্রচুর নির্ভর করে; যা সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলেছে।’
দেবপ্রিয় অভিযোগ করেন, ভৌত অবকাঠামো খাতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ হলেও স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ২০টি মেগা প্রকল্পে জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ জিডিপির এক শতাংশ।
তিনি জানান, রাজনৈতিক শক্তি রাজনৈতিক ঘাটতি পূরণের জন্য দ্রুত গতিতে দৃশ্যমান ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার চেষ্টা করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন সামাজিক সুরক্ষা নেট ভাতা বিতরণে বড় আকারের বৈষম্য হয়েছে। কারণ তখন প্রমাণিত হয়েছিল যে দুর্বল লোকদের জন্য সরকারি পরিষেবাগুলো পাওয়া সহজ ছিল না।
দেশে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা মহল নীতিনির্ধারকদের প্রশংসা পাচ্ছেন, যার জন্য মেধাভিত্তিক ও আন্তর্জাতিক মানের মানবসম্পদ উন্নয়নের অপর্যাপ্ত বিকাশ ঘটেছে।
ইআরএফের সভাপতি শারমিন রিনভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: দেশের রপ্তানি, সরকারি ব্যয় কমে যাওয়াটা বড় উদ্বেগের: সিপিডি
২০টি মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রয়োজন: দেবপ্রিয়