আদালতের আদেশ টেম্পারিং করে কক্সবাজার জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল ভুল নয়, অপরাধ করেছেন বলে জানিয়েছেন উচ্চ আদালত।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই)বিচারপতি মো. হাবিবুল গনি ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, ‘আপনি আদালতের আদেশ টেম্পারিং করেছেন। এতে আপনার বুক কাঁপল না? আপনি ভুল করেননি, ক্রাইম (অপরাধ) করেছেন।’
শুনানিতে জেলা জজের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা আদালতকে বলেন, ‘আমরা কনটেস্ট করতে চাই না। আমরা আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইছি। আমরা খুবই অনুতপ্ত।’
এ সময় হাইকোর্ট জেলা জজকে ডায়াসের সামনে ডেকে আদেশ টেম্পারিংয়ের বিষয়ে জানতে চান। তখন জেলা জজ বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে বলেন, ভুলে এটা হয়েছে। তখন আদালত বলেন, আপনি ভুল করেননি। আপনি জেনে বুঝে ক্রাইম করেছেন।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির সৌন্দর্য রক্ষায় হাইকোর্টের ৩ নির্দেশনা
এ সময় তার আইনজীবীরা আবারও ক্ষমা চাইলে হাইকোর্ট বলেন, আপনারা ক্ষমা চাইছেন। অনুতপ্ত হচ্ছেন। কিন্তু জেলা জজের মধ্যে তো কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি অনুতপ্তও নন। মন থেকে অনুশোচনা আসতে হয়।
পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ২৭ জুলাই দিন নির্ধারণের আদেশ দেন।
এর আগে গত ২১ জুন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়া আসামিদের আইন ভঙ্গ করে আদেশে মিথ্যা তথ্য লিখে একই দিনে জামিন দেওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজকে তলব করেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, ১৭ জুলাই সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হলে বুধবার জেলা জজ হাজির হন।
এ সময় প্রথম দিনের শুনানিতেও হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্মানজনক বিদায় চাইলে এমন কাজ করতে পারতেন না। পরে আদালত আজ বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, জমির দখল নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ভয়ভীতি প্রদর্শন ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে মিঠাছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ ভুট্টোসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন খোদেস্তা বেগম নামে এক নারী। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত–১ ও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী দ্রুত বিচার আদালতে নালিশি মামলা করেন তিনি। এই মামলায় আসামিরা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল হাইকোর্ট তাদের ছয় সপ্তাহের মধ্যে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতে গত ২১ মে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। সেদিন চিফ চুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৯ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে একই দিন আসামিরা কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
আদালত ৯ আসামির জামিন মঞ্জুর করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন (ফৌজদারি রিভিশন) করেন খোদেস্তা বেগম।
আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, ২১ মে দুপুর ১২টার দিকে ৯ আসামি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করেন। এর আগেই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আদেশের কপি পাননি উল্লেখ করে সকাল ১০টার দিকে আদেশের বিরুদ্ধে আসামিরা জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হলফনামাসহ আবেদন করেন।
এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জামিন নামঞ্জুরের আদেশসহ অন্য কাগজপত্রের প্রত্যায়িত অনুলিপি বা প্রত্যায়িত অনুলিপির ফটোকপি দাখিল করা হয়নি। আসামির কারাগারের মেয়াদসহ সার্বিক বিবেচনায় তাদের জামিন মঞ্জুর করা হয়— আদেশে উল্লেখ করেছেন জেলা জজ।
অথচ ৯ আসামি এক মুহূর্তও কারাগারে ছিলেন না। শুনানিতে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলে জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের কীভাবে জামিন দিলেন—এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। মামলার যাবতীয় নথি নিয়ে আসতে বলেন আদালত। মামলার কোনো সার্টিফাইড কপি ছাড়াই একই দিনে জেলা ও দায়রা জজ কোন আইনে, কীভাবে জামিন দিয়েছেন, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন: সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. মিলিকে আত্মসমর্পণে হাইকোর্টের নির্দেশ