তিনি বলেন, ‘পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নানের কাছে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার স্ত্রী জামিন চাইতে গেলে তিনি অত্যন্ত অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতেই আইন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে তাকে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়।’
বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
আনিসুল হক বলেন, ‘জামিন দেয়া বা না দেয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের ওপর। কিন্তু আদালতের কোনও সিদ্ধান্তে যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তখন কিন্তু একটা ব্যবস্থা নিতে হয়। পিরোজপুরে সেই অবস্থার আলোকেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি প্রশমিত করার জন্য পিরোজপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার স্ত্রীকে জামিন দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি না এখানে আইনের শাসনের ব্যত্যয় হয়েছে।’
আসামী এভাবে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলার মেরিট নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। প্রথম কথা হলো মামলার শুধু এফআইআর (এজহার) হয়েছে, এখনও চার্জশিট হয়নি। আপনারা জানেন আবদুল মান্নানকে হাইকোর্ট আগাম জামিন দিয়েছিল এবং সেটা চ্যালেঞ্জ করার জন্য আপিল বিভাগে যাওয়া হয়েছিল। আপিল বিভাগ সেটা খারিজ করে দেয়।’
‘কালকে (মঙ্গলবার) বিচারক যদি বারের সাথে যেভাবে ব্যবহার করেছেন সেটা না করতেন তাহলে এ পরিস্থিতি হতো না,’ বলেন আইনমন্ত্রী।
আইনজীবীরা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে এর থেকে বেশি কিছু বলতে চাই না। বিষয়টি নিয়ে আমি নিরপেক্ষ থাকতে চাই যতক্ষণ পর্যন্ত না তথ্যাদি আমার সামনে আসে।’
এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইনের শাসন নিশ্চিত হচ্ছে, এটা আপনারা দেখছেন। এখানে সরকারি দলের লোক কিংবা বিরোধী দলের লোক সেটা বিবেচনা করা হয়নি। বারবার আপনাদের বলছি, ব্যবহারটা ঠিক করে করা হয়নি। পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয় সে জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।’
মঙ্গলবার পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা তিন মামলায় জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি একেএম আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এ আদেশের প্রতিবাদে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং ক্ষমতাসীন দলের পক্ষের আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করলে, বিচারক আবদুল মান্নানকে স্ট্যান্ড রিলিজ (বদলি) করা হয়। এরপর যুগ্ম ও দায়রা জজ নাহিদ নাছরিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব অর্পণ করেন বিচারক আবদুল মান্নান। পরে ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত রিভিউ পিটিশন গ্রহণ করে এমপি আউয়াল ও তার স্ত্রীকে দুই মাসের জামিন মঞ্জুর করেন।