জাতীয় অর্থনীতি পরিষদ (এনইসি) ২০২৩ অর্থবছরে দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’র (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি।
মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, অপব্যবহার রোধ করে সরকারি তহবিলের সর্বোত্তম ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এডিপিতে নতুন প্রায় এক হাজার ৪৩৫টি প্রকল্প রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় এক হাজার ২৪৪টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ১০৬টি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্প এবং প্রায় ৮৫টি প্রকল্প স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং কর্পোরেশনগুলোর নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হবে।
এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকার এনইসি সম্মেলন কক্ষ এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষ থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা বৈঠকে অংশ নেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরের মূল এডিপির দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকার মধ্যে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ দশমিক ৯ কোটি টাকা স্থানীয় উৎস থেকে আসবে এবং বাকি ৯৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে দেয়া হবে।
এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং কর্পোরেশনগুলোর বিপরীতে ৯ হাজার ৯৩৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ বিবেচনা করে, আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপির সামগ্রিক বরাদ্দ দুই লাখ ৫৬ হাজার তিন দশমিক ২৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: ২,০৭,৫৫০ কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি অনুমোদন করেছে এনইসি
চলমান ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল এডিপি’র আকার ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকা; যা পরে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ৯ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি এবং চলতি অর্থবছরের আরএডিপি থেকে ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।
১৫টি সেক্টরের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার ৬৯৫ দশমিক ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের পরের অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩৯ হাজার ৪১২ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা, শিক্ষা খাতে ২৯ হাজার ৮১ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাতে ১৯ দশমিক ৮৭৭ কোটি টাকা।
নতুন এডিপি বরাদ্দসহ অন্যান্য খাতগুলো হল- সাধারণ সরকারি পরিষেবা খাতে দুই হাজার ৮৭৫ দশমিক ২৮ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে এক হাজার ২৭০ দশমিক পাঁচ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাতে তিন হাজার ৬০৯ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক পরিষেবা খাতে পাঁচ হাজার ৪০৭ দশমিক ২৬ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ১০ হাজার ১৫৭ দশমিক চার কোটি টাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৬৫ দশমিক দুই কোটি টাকা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও জলসম্পদ খাতে নয় হাজার ৮৫৯ দশমিক ২৫ কোটি টাকা, ২৪ হাজার ৪৯৭ দশমিক ২২ কোটি টাকায় আবাসন ও কমিউনিটি সুবিধা, দুই হাজার ৩৬৪ দশমিক ৯১ কোটি টাকায় ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে, দুই হাজার ৩৬৪ দশমিক ৯১ কোটি টাকায় বিজ্ঞান ও আইসিটি খাতে চার হাজার ৯০১ কোটি টাকা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে দুই হাজার ৫৬৯ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক নতুন এডিপি বরাদ্দ হলো- স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৩৫ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রায় ৩১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ প্রায় ২৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় এবং বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় প্রায় ১৬ হাজার ১১ কোটি টাকায় প্রযুক্তি, প্রায় ১৫ হাজার ৮৫১ কোটি টাকায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রায় ১৪ হাজার ৯২৯ কোটি টাকায় রেলপথ মন্ত্রণালয়, প্রায় ১৪ হাজার এক কোটি টাকায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রায় ১১ হাজার ৬৪২ কোটি টাকায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ, প্রায় নয় হাজার ২৯০ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় সাত হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: কৃষি মন্ত্রণালয়ের এডিপির হার ৭৬ শতাংশ
মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি প্রায় ১৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার সর্বোচ্চ নতুন এডিপি বরাদ্দ পেয়েছে। তারপর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রায় আট হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা, প্রায় ছয় হাজার ৫৫৪ কোটি টাকায় মাতারবাড়ি ২x৬০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, প্রায় ছয় হাজার ১৯ কোটি টাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায়), প্রায় পাঁচ হাজার ৮০৯ কোটি টাকায় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপারনেস (ডব্লিইবি-জিওবি) প্রকল্প, প্রায় চার হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, প্রায় তিন হাজার ৮৫১ কোটি টাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প, প্রায় তিন হাজার ৭০৩ কোটি টাকায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প, প্রায় তিন হাজার ৫৯ কোটি টাকা দিয়ে ডিপিডিসি এলাকায় পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ এবং প্রায় দুই হাজার ৮৮৩ কোটি টাকা দিয়ে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড প্রকল্প ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬)।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারি তহবিলের সব স্তরে অপব্যবহার রোধ করতে।
তিনি বলেন, সভায় জানানো হয় যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ আরও বাড়বে এবং এইভাবে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে।
তিনি উল্লেখ করেন, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পায়রা বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের সুবিধা হবে।
এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজ সময়সূচি অনুযায়ী চলছে বলেও জানান মন্ত্রী।
বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী অর্থবছরে সরকারের সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, সরকার অবশ্যই অপব্যবহার বন্ধ করে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যয় করার চেষ্টা করবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সতর্ক আছি, তবে আমরা কিছুতেই ভয় পাই না।’
তিনি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে বৈদেশিক ঋণ প্রবাহে কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা কমানো হলেও সার্বিক এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মামুন-আল-রশিদ বলেছেন, মহামারি পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মক্ষমতা বিবেচনা করে, নতুন এডিপিতে এর বরাদ্দ ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।