দেশের ই-কমার্স খাত থেকে অর্থপাচারের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ এবং এ খাতের কর আদায়ে নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে প্রতিবেদন চেয়ে নির্ধারিত সময়ে তা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আদালত বলেন, ‘নোটিশ জারির পরেও তারা রেস্পন্স করবে না? বিষয়টি আমরা কিন্তু সিরিয়াসলি নেব।’ এসময় আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রপক্ষের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ’ মি. ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আপনি অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি তাকে জানান। এসব আমরা কিন্তু টলারেট করবো না।’
আরও পড়ুন: আইন বিভাগের মতামতের পর ই-কমার্স গ্রাহকদের গেটওয়ের টাকা ফেরত
এরপর আদালতে ২৩ নভেম্বর মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়ে ওইদিন পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা কোথায় গেল, কিভাবে এসব টাকা হস্তান্তর হয়েছে, এক্ষেত্রে যে অর্থ পাচার হয়েছে-সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চান। একইসঙ্গে ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক লেনদেনের বিপরীতে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ে কি পলিসি নেয়া হয়েছে, আদৌ কোন পলিসি আছে কিনা কিংবা ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করা হয় কিনা-সে ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরকে) জানাতে বলা হয়। পাশাপাশি ই-কমার্স খাতের স্বার্থে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের করা ১৬ সদস্যের কমিটির কার্যপরিধি কী তাও জানতে চান আদালত। সরকারও এ বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে বলা হয়। ই-কমার্স কোম্পানির গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় ভুক্তভোগীদের করা পৃথক তিনটি রিটের শুনানিকালে হাইকোর্ট এসব আদেশ দেন। এ বিষয়ে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল না করায় গতকাল ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: দারাজসহ ২৩ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব
এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর ই-কমার্স গ্রাহকদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসির ম্যান্ডেট অনুসারে একটি স্বাধীন ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আনোয়ারুল ইসলাম এ রিট দায়ের করেন। পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন এবং ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের দুজন গ্রাহকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব একটি রিট করেন। এই রিটে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে যাদের গাফিলতির কারণে ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, দারাজ, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ ও দালাল প্লাসের মতো পরিচিত ই-কমার্স কোম্পানি থেকে প্রতারিত হয়ে লাখ লাখ গ্রাহক সর্বসান্ত হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, এ পর্যন্ত এসব ই-কমার্স কোম্পানি থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ নিরূপণ করে দুদকের মাধ্যমে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পর্যন্ত ইভ্যলি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকেম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ, ইত্যাদিতে মোট কত টাকা লেনদেন হয়েছে এবং গ্রাহকরা মোট কত টাকা দিয়েছে তা চিহ্নিত করা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত কতগুলো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে এবং তারা কি কি পদক্ষেপ এ পর্যন্ত নিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতা কমিশনকে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ অনুযায়ী, ই -কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণ দায়িত্ব নেয়াসহ ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নজরদারি, অসম প্রতিযোগিতা রোধ, জনসচেতনতা তৈরি ইত্যাদি পদক্ষেপ নেয়া, জাতীয় ডিজিটাল বাণিজ্য নীতি, ২০১৮ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে হেল্প ডেস্ক অবিলম্বে চালু করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ই-কমার্স: গেটওয়েতে আটকা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের রুল
পরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ই-অরেঞ্জের কাছে আটকে থাকা টাকা উদ্ধারে ৩৩ জন গ্রাহক একটি রিট করেন। এই রিটে ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহে রিসিভার নিয়োগের, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রদান এবং গ্রাহক ও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু পরিচালনার নিমিত্তে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয়ার জন্য অর্থনীতিবিদ, তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের আর্জি জানানো হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর এই তিনটি রিটের ওপর একসাথে শুনানি হয়।