ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। সোমবার (১৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে র্যাগিংয়ের এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে ১৬ নভেম্বর রাতে ক্যাম্পাসের পাশের একটি ছাত্রাবাসে প্রথম দফায় র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এরপর দ্বিতীয় দফায় র্যাগিংয়ের সময় হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা খবর পেয়ে অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
আটক শিক্ষার্থীরা হলেন- সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব খান এবং ল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া।
এর আগে ১৬ নভেম্বর প্রথম দফায় র্যাগিংয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন-ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সাব্বির হোসেন, লিমন হোসেন, শেহান শরীফ, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব খান ও জিহাদ। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা-গবেষণা নিশ্চিত করা হবে: ভিসি নসরুল্লাহ
শফিউল্লাহর নেতৃত্বে আটজন শিক্ষার্থী মিলে নবীন ১৬ শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হাসানুল বান্না অলিসহ হলের শিক্ষার্থীরা তাদের হাতেনাতে ধরে থানায় হস্তান্তর করেন।
জানা যায়,গত রাত সাড়ে ৯টার দিকে ভুক্তভোগীদের ডাকে অভিযুক্ত শেহান। পরে তাদের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর রুমে ডাকেন অভিযুক্তরা। অতঃপর ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুনসহ ঐ রুমে যান। একপর্যায়ে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের অ্যাসাইনমেন্ট লেখা লাগবে বললে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর চারজনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয়।
এ সময় ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, আরেকজনকে কল দিয়ে বাজে ভাষা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনকে নাচতে বলা হয়। এ সময় হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদের হাতেনাতে ধরেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের থানায় হস্তান্তর করেন।
এদিকে এর আগে গত ১৬ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে নবীন ব্যাচের ১২জন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী একটি ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা। পরে তাদেরকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ণ সিনেমার তারকাদের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। কাউকে পর্ণ তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয়। আরেকজনকে বলে রিলেশনশীপের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে। এরকম নানা হয়রানির পর হুমকিও দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৪৫ আসন খালি
এ সময় উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন- ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ,তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ।
এদিকে র্যাগিং চলা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা হলটির সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসে, হলের ৩৩০ নম্বর রুমে র্যাগিং চলতেছে। তারপরেই আমি সেখানে গিয়ে দেখি সাব্বির এবং সঞ্চয় দুজন মিলে ওদেরকে র্যাগ দিচ্ছে। পরে তারা ঘটনার কথা অস্বীকার করে। এর পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তখন ভুক্তভোগীরা র্যাগিং চলছিল বলে নিশ্চিত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের থানায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, ‘আমি হলের কক্ষে ছিলাম না। পরে আমাকে ডাকা হয়। এ সময় ভিতরে গিয়ে বান্না ভাইকে দেখতে পাই। এর আগে গতদিন মেসে জুনিয়রদের সঙ্গে আমরা বসেছিলাম। ওদিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সব শিক্ষকের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। কেউ না পারলে তাকে একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে এ সময় কারো মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।’
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠার ৪৩ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
এদিকে ইবি থানার কর্তব্যরত অফিসার এস আই মাসুদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কাছে ছয়জনকে নিয়ে এসেছেন। পরে তাদের থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’