ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নির্যাতিত কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ওই ছাত্রী হাইকোর্টের শনিবারের নির্দেশনার আদেশ অনুযায়ী কড়া নিরাপত্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরেছে।
১২ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা হলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়(আইইউ) ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার কর্মীদের হাতে নির্যাতন ও ভয় দেখানোর পাঁচ দিন পর তিনি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন।
শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই শিক্ষার্থীকে বহনকারী একটি পুলিশ ভ্যান ক্যাম্পাসে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতে তাকে সরাসরি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নিয়ে যাওয়া হয়।
পরে বেলা ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত যথাক্রমে হল কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি তার সাক্ষাৎকার নেয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন্নুর জায়েদ বিপ্লব ইউএনবিকে বলেন, শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন বলে জানান ওসি।
এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি আইইউ ছাত্রলীগ শাখার সহ-সভাপতি ও আবাসিক ছাত্রী শানজিদা চৌধুরী অন্তরা ওই ছাত্রীকে তার কক্ষে ডেকে নেন।
শনিবার রাতে অসুস্থতার কারণে অন্তরার সঙ্গে দেখা না করায় অন্তরা এবং তার অর্থ ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুমের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ কর্মী ভিকটিমের কক্ষে যায় এবং তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
পরে, অন্তরা ও তার সহকর্মীরা তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত ও নির্যাতন করে। অন্তরা একপর্যায়ে ভিকটিমকে কাপড় খুলে ফেলতে বাধ্য করে এবং তার মোবাইল ফোনে ‘র্যাগিং’ ঘটনার ভিডিও করে।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে মশাল মিছিল
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, অন্তরা হুমকি দিয়েছিল যে যদি ভিকটিম বিষয়টি কাউকে প্রকাশ করেন তাহেলে তিনি ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করবেন। সব মিলিয়ে তার অগ্নিপরীক্ষা ৪ ঘন্টারও বেশি স্থায়ী হয়েছিল বলে জানা গেছে।
১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও আইনজীবী গাজী মোহাম্মদ মহসিন বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে একটি রিট আবেদনও করেন।
বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অভিযুক্তকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত কমিটির পাশাপাশি, ঘটনার আরও তদন্তের জন্য একটি পৃথক কমিটি গঠন করতে এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি: ঢাবির ২ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার