নদীবেষ্টিত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে দফায় দফায় বন্যা আঘাত হেনেছে। ফসলের জমি, মাছের ঘের এবং নদী ভাঙ্গনের ফলে হাজার হাজার মানুষ খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, দেশের এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যা ইতোমধ্যে ১৫ লাখের বেশি মানুষকে প্রভাবিত করেছে।
ইতোমধ্যে জাতিসংঘ সতর্ক দিয়ে দিয়ে বলছে, ১৯৮৮ সালের পর বাংলাদেশের এবারের বন্যা সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
বেঁচে থাকাটাই যেখানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ:
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ পানি, খাদ্য, আশ্রযয়ের অভাবে ভুগছেন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সমীক্ষায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করা মানুষদের কাছে বন্যা মারাত্মক ধাক্কা হিসেবে এসেছে।
বন্যা পরিস্থিতি
বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কতা কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) শুক্রবার জানিয়েছে, দেশের ২০টি জেলার বাসিন্দারা বন্যার পানিতে ডুবে আছেন।
এফএফডব্লিউসি এক বুলেটিন জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা জেলায় বন্যার পরিস্থিতি আরও উন্নত হতে পারে এবং মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর জেলা ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চল এলাকায় স্থির থাকতে পারে।
তবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নওগাঁ জেলায় সামগ্রিকভাবে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এফএফডব্লিউসি জানায়।
বর্তমানে ১৯টি নদীর পানি বিপদ সীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইউএনবির কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানিয়েছেন, নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে বন্যার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ১৫ শিশুসহ ২০ জন পানিতে ডুবে গেছে।
শনিবার ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি
দেশে করোনাভাইরাসে আরও ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সাথে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫২০ জন।
শনিবার নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা এ তথ্য জানিয়েছেন।
করোনায় দেশে এখন মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৭৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ২৬৬ জন এবং নারী ৬০৮ জন। আর মোট শনাক্ত হয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ১৭৮ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৬১৫টি এবং পরীক্ষা করা হয়েছে আগের নমুনাসহ ১০ হাজার ৪৪৬টি। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ১১ লাখ ১ হাজার ৪৮০টি। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ১২ শতাংশ। আর মোট পরীক্ষার ক্ষেত্রে শনাক্ত হয়েছেন ২০ দশমিক ০৮ শতাংশ।
করোনায় ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যায় এর পরে রয়েছে চট্টগ্রাম।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে গত ২৫ মে মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উত্সব ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছিল।