সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে নববধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের মামলার চার্জ গঠন পিছিয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) প্রথমবারের মতো গণধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের দুটি মামলার নথিপত্র একসাথে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়। ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক আদালতে মামলার অতিরিক্ত চাপ ও স্টেনো না থাকায় চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের মামলার অভিযোগ গঠন পিছিয়ে দেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি এডভোকেট রাশিদা সাঈদা খানম জানান, স্টেনোগ্রাফার না থাকার প্রেক্ষিতে চার্জ গঠনের তারিখ পেছানো হয়েছে। একই সাথে আদালতে ৩ আসামি অব্যাহতির আবেদন করেছে।
আদালতে মামলা জটের কারণে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের মামলার অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান অ্যাডভোকেট শহিদুজ্জামান চৌধুরী। পরবর্তী ধার্য তারিখে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের মামলার অভিযোগ গঠন ও আসামিদের অব্যাহতির আবেদনের ব্যাপারেও শুনানি হবে।
২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে চাঞ্চল্যকর এই মামলার অভিযোগপত্র প্রদান করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।
এর মধ্যে ধর্ষণ মামলার অভিযোগপত্র নারী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ও চাঁদা দাবি ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলাটির অভিযোগপত্রটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে জমা দেয় পুলিশ।
আরও পড়ুন: এমসি কলেজে গৃহবধূ ধর্ষণ: নতুন করে গঠন হবে মামলার অভিযোগ
অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়াকে সরাসরি ধর্ষণে সম্পৃক্ত এবং রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমকে ধর্ষণের সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই আটজনই বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. শহীদুজ্জামান জানান, এসমি কলেজ ছাত্রবাসে আলোচিত এ ধর্ষণের অভিযোগে একটি ও ভুক্তভোগীর স্বামীর কাছে চাঁদা দাবি ও গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করে।
অ্যাডভোকেট মো. শহীদুজ্জামান জানান, বাদীপক্ষ মনে করে একই ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলা দুই আদালতে বিচারকাজ পরিচালিত হলে সাক্ষীরা দুই আদালতেই সাক্ষী দিতে হবে। এতে নানা অসঙ্গতি দেখা দিবে। এতে বিচার প্রক্রিয়াও ব্যাহত হবার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই দু’টি মামলাই একই আদালতে বিচার করার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে। পরে হাইকোর্ট দুটি মামলা একই আদালতে বিচারের আদেশ দেন।
এ আদেশের পর সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলা একসাথে বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১৭ জানুয়ারি আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।
পড়ুন: এমসি কলেজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: অধ্যক্ষ ও হোস্টেল সুপারকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ
এমসি কলেজে ধর্ষণ: ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির বিচার একসাথে চলবে
গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজে স্বামীর সাথে বেড়াতে আসা ওই গৃহবধূকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করেন কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।
এ ঘটনায় পরদিন সকালে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বহুল আলোচিত এ মামলায় ৪৯ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।