১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
যুব দিবসের এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের অংশগ্রহণ’।
একই সাথে সংস্থাটি দেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি নির্মূলের আহ্বান এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ বন্ধ ও বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তাদের উদ্যোগে বাংলাদেশে পরিচালিত দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তরুণরাই মূল চালিকাশক্তি। ২০০৬ সাল থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণদের সম্পৃক্ত করে ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) প্লাটফর্মের মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন সচেতনতা ও প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিআইবি। যার মূল ভিত্তি হচ্ছে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে তরুণদের সচেতন করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের এজেন্ট হিসেবে তৈরি করা। জাতিসংঘ ঘোষিত এবারের যুব দিবসের মূল প্রতিপাদ্যকে তারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মনে করছে টিআইবি।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে ২০টিতেই সরাসরি তরুণদের কথা বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, বিশেষ করে লক্ষ্যমাত্রা ৪, ৫ ও ৮-এ স্পষ্টতই তরুণদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৪-এ সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা, লক্ষ্যমাত্রা ৫-এ নারীদের সমঅধিকার ও কন্যা শিশুদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা এবং লক্ষ্যমাত্রা ৮-এ সবার জন্য স্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে উৎসাহিত, পরিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং উপযুক্ত কর্মের নিশ্চয়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে এসডিজি ১৬-তে টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ব্যবস্থা, সকলের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং সকল স্তরে কার্যকর জবাবদিহিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
‘এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনদের পাশাপাশি সুশিক্ষিত, দক্ষ ও সচেতন যুবসমাজ ও তাদের অংশগ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই এসডিজি অর্জনের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে যুবসমাজ যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি-কৌশল প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং তার বাস্তবায়নকারীর ভূমিকা পালনে সক্ষম হতে পারে তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তরুণ জনগোষ্ঠী শিক্ষা, পেশা ও মানসিক স্বাস্থ্যগত বিষয়ে ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে আছে উল্লেখ করে নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পুরো বিশ্বের মতো কোভিড-১৯ বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক ও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়লেও বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য ঝুঁকিটা বেশি। অতিমারি পরিস্থিতিতে তরুণদের চাকরির ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। নতুন ও অভিনব কর্মক্ষেত্রে অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনাময় তরুণদের সিংহভাগই পিছিয়ে আছে। নতুন স্বাভাবিকতায় বাজারে যে নতুন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হবে, একদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পুঞ্জীভূত দুর্বলতা ও অন্যদিকে দীর্ঘদিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে যুক্ত না থাকায় সেটি অর্জনও তরুণদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ভবিষ্যত ভাবনায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি।’
বাংলাদেশ বর্তমানে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ কাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশটিই বর্তমানে কর্মক্ষম যুবসমাজ; অথচ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তরুণদের অংশগ্রহণের ঘাটতি যেমন বিদ্যমান তেমনি তরুণদের রাজনীতিবিমুখতার হারও আশঙ্কাজনক। রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে তরুণদের অংশগ্রহণের পথও নানা আইনি ও পদ্ধতিগত বাধায় আটকে আছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাধীন মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নীতি-কৌশল এবং রাষ্ট্রীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে মত প্রকাশের দায়ে নাগরিকদের অযাচিত মামলা ও আটকের ঘটনায় যুবসমাজের ওপরই বেশি প্রভাব পড়েছে। এতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ইস্যুতে যুবকদের অংশগ্রহণ ও মত প্রকাশ সীমিত ও সংকুচিত হচ্ছে।’
এবারের আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে টিআইবি যে দাবিগুলো উত্থাপন করছে তার মধ্যে রয়েছে- এসডিজি অর্জনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি-কৌশল প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ সমাজ যাতে সমস্ত ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্বিঘ্নে তাদের মতামত প্রকাশ ও প্রতিবাদ করার আইনি অধিকারের চর্চা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ একই ধরনের অন্যান্য আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় যুবনীতি-২০১৭ এর পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। কোভিড-১৯ অতিমারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় তরুণদের কার্যকর ও অর্থবহ অংশগ্রহণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কোভিড-১৯ বাস্তবতায় নতুন স্বাভাবিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে হবে; সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে; এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের পাশাপাশি পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান, আইনি সহায়তা ও বাজারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ ও ব্যাংক ঋণ পাবার শর্ত ও সুদ হার সহজ করতে হবে।