বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সহযোগিতা চাইবে এবং আগামী ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নিতে শনিবার রাতে (আজ রাতে) যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সফরের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনকালে ড. মোমেন জানান, আমরা এ বিষয়টা উত্থাপন করব (র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করা)। তারা (র্যাব সদস্যরা) অত্যন্ত দক্ষ ও কার্যকর; সর্বোপরি তারা দুর্নীতিমুক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত।
বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও শান্তিপ্রিয় দেশ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা দ্রব্য ও সরঞ্জাম কিনতে তেমন আগ্রহী না। কিন্তু জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে আমরা এ বিষয়ে সম্পৃক্ত হতে চাই।
আরও পড়ুন: মানবিক কারণে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সাম্প্রতিক সফরের সময় ঢাকায় এক যৌথ মিডিয়া ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের বলেন,আমরা খুব আত্মবিশ্বাসী যে আমরা সমস্যাটির নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হব। যাতে আমরা একসঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়ে আরও কিছু করতে পারি।
নুল্যান্ড ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এ বছর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র বেশ কিছু বিষয়ে নতুন করে সম্পৃক্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছু মৌলিক প্রতিরক্ষা চুক্তি শেষ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে আমরা (মার্কিন প্রস্তাবগুলো) বাদ দিইনি, আবার গ্রহণও করিনি। আমরা এখনও বিবেচনা করছি।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং শান্তিপ্রিয় দেশ। এ দেশের সঙ্গে তার সব প্রতিবেশীর খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং বাংলাদেশ নিজে কোনো অস্ত্রাগার তৈরি করতে চায় না, তার প্রয়োজনও নেই।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনই কোনো চাপের কাছে আত্মসমর্পণ করেন না। যা জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করে, তিনি এমন কাজই করেন।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্র কার্যকরে সব দলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রয়োজন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মোমেন বলেন, তারা বোঝেন এটি (অস্ত্র বিক্রি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ব্যবসা। তবু তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অস্ত্র ছাড়াও অন্য ক্ষেত্রগুলোতে সম্পৃক্ততা তৈরি করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, সহযোগিতার অনেক নতুন ক্ষেত্র রয়েছে যেমন- প্রযুক্তি হস্তান্তর, ওষুধ, সুনীল অর্থনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এ বিষয়গুলোতে মার্কিন পক্ষ এগিয়ে আসতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আনতে ইচ্ছুক। দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কে মার্কিন বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাবে বাংলাদেশ।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়টিও উত্থাপন করবে এবং তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের দাবি জানাবে।
অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুও উঠে আসবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ড. মোমেনের সফরে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ দেশের পরিবহন ও কৃষি উৎপাদন খরচকে প্রভাবিত করবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এর লক্ষ্য এমন একটি অঞ্চল তৈরি করা যার মাধ্যমে বাংলাদেশ, চীন, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলের প্রতিটি দেশ উন্নতি লাভ করতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সুযোগ-সুবিধা খতিয়ে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত একটি উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের আসন্ন সফরের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি একটি আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তুলতে এবং আমাদের সকল জনগণের সুবিধার জন্য মার্কিন বিনিয়োগকারীদের নতুন সেক্টরে প্রবেশে সহায়তা করতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, তারা একটি ব্যাপক ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করছে। যার মধ্যে মূল ক্ষেত্রগুলোতে জলবায়ু এবং পরিষ্কার শক্তি, ন্যায্য বাণিজ্য সুবিধা, স্থিতিস্থাপক সরবরাহ চেইন এবং ডিজিটাল অর্থনীতির মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য উন্মুখ।