সাতক্ষীরায় এক ব্যক্তির মামলা না নেয়ার ঘটনা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদন শুনানিকালে মঙ্গলবার বিচারপতি নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো রিট আবেদনটির শুনানি শুরু হলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম আদালতকে জানান, সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারীর মামলা না নেয়ার অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে বলে, ‘ওসি মামলা নিলেন না কেন? আমরা রুল দিয়ে দেখি কেন তিনি মামলা নিলেন না।’
আদালত আরও বলে, ‘১৩ হাজার পুলিশ যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হতে পারে না। অনেক পুলিশ খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করেন। অথচ অনেকের দেখি ৪-৫টা করে বাড়ি। দেশটা কি চোরের দেশ হয়ে গেছে?’
আদালত সূত্র জানায়, জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউসুফ আলীসহ কিছু লোক শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের মো. ফজলুর করিমের বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় তারা ফজলুর করিমকে মারধর করে নগদ দুই লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি স্বর্ণের চেইন ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। যাওয়ার সময় তারা বাড়ির সীমানা প্রাচীরও ভেঙে রেখে যায়।
ইউসুফ ও তার সঙ্গে আসা ব্যক্তিরা ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা চালানোর সময় শ্যামনগর থানার ওসিকে ফোন দিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন ফজলুর করিম। ওসি সে সময় তাকে বলেন, অন্য কাজে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে বিষয়টি দেখবেন। এরপর ফজলুর করিম কালিগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পাশাপাশি ৯৯৯-এ ফোন করে সাহায্য চাইলে শ্যামনগর থানার একজন এএসআই ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
ফজলুর করিমের বাড়িতে থেকে ওই এএসআই থানার ওসিকে ফোন করেন। এক পর্যায়ে এএসআই ফজলুর করিমকে ফোন ধরিয়ে দেন ওসির সঙ্গে কথা বলার জন্য। ওসি তখন ফোনে ফজলুর করিমকে শাসিয়ে বলেন, ‘উপর মহলে নালিস করিস, তোর মামলা হবে না। কোর্টে মামলা কর।’ তখন ফজলুর করিমের বাবা অনুনয় বিনয় করলে ওসি বলেন, ‘কাল সকালে আবার তদন্ত হবে।’
পরদিন শ্যামনগর থানার এসআই মরিুজ্জামান ফজলুর করিমের বাড়িতে গিয়ে তদন্ত করে বলেন, মামলা হবে না। পারলে চেয়ারম্যানের সাথে বসে মিমাংসা করেন। ফজলুর করিম শালিসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার ২৬ ফেব্রুয়ারি ওসিকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও ওসি কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ফজলুল করিম ৩ মার্চ হাইকোর্টে এসে রিট করেন। রিট আবেদনের ওপর ১০ মার্চ প্রাথমিক শুনানি হয়।
রিটকারীর আইনজীবী মো. শামসুল হক কাঞ্চন জানান, আদালত ১০ মার্চ রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার জন্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলমকে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছিল। মঙ্গলবার তিনি আদালতকে জানান, ঘটনার আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে এবং এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। তখন আদালত তাকে তদন্ত প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করার নির্দেশ দেয় এবং পরবর্তী শুনানির জন্য রবিবার দিন ধার্য করে।
সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ স্বর্ণালঙ্কার লুট, হামলা ও দরজা ভাঙার কোনো প্রমাণ পায়নি। কিন্তু পাঁচিল ভাঙার প্রমাণ পেয়েছে। আদালতকে এটা জানানোর পর আদালত বলল, ‘যেহেতু পাঁচিল ভাঙা পেয়েছে, আংশিক সত্যতা তো পাওয়া গেছে। তাহলে পুলিশ কেন মামলা নিবে না?’
এ আইন কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি পারিবারিক বিরোধ হওয়ায় ওসি শালিসের মাধ্যমে তা নিষ্পত্তির কথা বলেছিলেন। তা শুনে আদালত অসন্তুষ প্রকাশ করে বলে যে পুলিশের কাজ তো এটা না। তাদের কাজ ঘটনার সত্যতা যাচাই করে মামলা নেয়া। পরবর্তী তদন্তে যদি ঘটনা মিথ্যা প্রমাণ হয় তাহলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তা বাদ দেবে বা আসামিদের খালাস দেবে।
১৩ হাজার পুলিশের দুর্নীতি নিয়ে আদালতের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি সমীক্ষা তুলে ধরে আদালত বলেছে যে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার দুর্নীতিগ্রস্ত। দুই লাখ সদস্য সৎ এবং ভালো। সুতরাং এ ১৩ হাজারের কারণে দুই লাখ পুলিশ সদস্যের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে না।’
আদালত রিট আবদনের শুনানি রবিবার পর্যন্ত মুলতুবি রেখে এর মধ্যে শ্যামনগরের পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে বলে জানান তিনি।