পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার আরও ১৮টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে।
এসব লাশের মধ্যে নারী ৩০ জন, শিশু ২১ জন এবং পুরুষ ১৭ জন।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, মঙ্গলবার রাতে তৃতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আর মাত্র চারজন নিখোঁজ রয়েছে।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় নৌকা ট্র্যাজেডি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৪
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ২৫ জন এবং সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ২৫ জন লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মঞ্জিল হক জানান, নদীর পানি নামতে শুরু করেছে, নদীর তলদেশে কাঁদার মধ্যে আটকে পড়া লাশ উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ভাটির দিকে ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুডুরি দল স্থানীয়দের সহায়তায় অভিযান পরিচালনা করছেন।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত লাশগুলো শনাক্ত করে স্বজনদের হাতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানান ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
অনুকূল আবহাওয়া ও নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারনে দ্রুতই লাশ উদ্ধার সম্ভব হবে বলে আশা করছেন তিনি।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় নৌকাডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৫
মঙ্গলবার দুপুরে রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্সের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়াহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদাসহ জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আসেন।
এসময় মাড়েয়া ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত জরুরি তথ্য ও সহায়তা কেন্দ্রে রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য অবহিত করেন।
মন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের শুরুর দিকে আউলিয়ার ঘাটে ওয়াই মডেলের ব্রিজ নির্মাণ শুরু হবে। ইতোমধ্যে নকশাসহ একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়েছে।
২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ব্রিজটির খুব শিগগিরই টেন্ডার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এছাড়া নৌকাডুবিতে কর্মহীন মানুষ যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবার পূর্ণবাসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় নৌকাডুবি: দু’দিনে অর্ধশত লাশ উদ্ধার
তিনি আরও জানান, সরকারের পক্ষে মৃতের প্রত্যেক পরিবারকে সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ২৫ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়েছে। সকল লাশ উদ্ধারের পর পরিবারগুলোর অবস্থা বিবেচনা করে কার জন্য কি করা যায় সেটা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, নিখোঁজের যে তালিকা করা হয়েছে, শেষ ব্যক্তিটিকে উদ্ধার করা পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে।
পরে রেলমন্ত্রী মৃত পরিবারদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহযোগিতাও দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বধেশ্বর মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) মহালয়া উপলক্ষে এক বিশাল ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। এই ধর্মসভায় যোগ দিতে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন শ্যালো মেশিন চালিত নৌকা করে যাচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝনদীতে গিয়ে ট্রলারটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়।
আরও পড়ুন: করতোয়ায় ট্রলারডুবি: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬, এখনও নিখোঁজ ৪০