বাংলাদেশে ইফাদের নবনিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ভ্যালান্টাইন আচানচো বলেছেন, কৃষি ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর রূপান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের 'অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা' রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সরকার, আমাদের অংশীদার ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের কৃষি ব্যবস্থা জোরদার করতে এবং দেশজুড়ে জীবনযাত্রার উন্নতিতে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমরা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি এবং ক্ষুদ্র চাষিদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সাফল্য অর্জনে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারি।’
সম্প্রতি পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের কাছে তার পরিচয়পত্র উপস্থাপন করার সময় আচানচো এসব কথা বলেন।
আচানচো বলেন, কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ আয় বৃদ্ধি এবং ক্ষুদ্র কৃষক, নারী ও যুবকদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ)।
ইফাদ একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা।
শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএফএডি জানায়, বাংলাদেশে আসার আগে আচানচো ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ইফাদের কান্ট্রি ডিরেক্টর এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি নাইজার, বুরকিনো ফাঁসো ও চাদে একই পদে কাজ কাজ করেছেন।
তিনি ক্যামেরুন ও গ্যাবনে ইফাদের কান্ট্রি প্রোগ্রাম অফিসার এবং ভারত মহাসাগর অঞ্চলের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সাহেল ও কঙ্গো অববাহিকায় গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পে অবদান রেখেছেন। সহ-অর্থায়ন জোরদার করেছেন এবং গ্রামীণ জীবনযাত্রার উন্নয়নে সরকার, দাতা ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে অংশীদারত্ব জোরদার করেছেন বৈশ্বিক সংস্থাটির এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসেবে তার নতুন দায়িত্বে আচানচো জাতীয় সরকারের অবকাঠামো কর্মসূচি এবং জলবায়ু-স্মার্ট কৃষির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জলবায়ু সহনশীলতা জোরদার করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে কাজ করবেন। এছাড়া গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র কৃষক এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য অর্থ, প্রযুক্তি এবং বাজারের সুবিধা বাড়াতে কাজ করবেন তিনি।
আরও পড়ুন: উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রশংসা ইফাদ প্রেসিডেন্টের
আচানচো বলেন, ‘আমি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন, তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতার জন্য টেকসই জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তুলতে আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে নিবেদিত।’
২০১১ সালে ইফাদে যোগদানের আগে আচানচো কৃষকদের পেশাদার সংগঠন এবং সমবায় আন্দোলনের উপপরিচালক এবং ক্যামেরুনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য বিশ্লেষণ এবং কৃষি নীতির দায়িত্বে জেষ্ঠ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন।
এর আগে তিনি এএফডির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পে জাতীয় সমন্বয়কারী, ক্যামেরুনের ডিসচ্যাং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞান অনুষদের ভিজিটিং লেকচারার এবং আইএফএডি, ওয়ার্ড ব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অপারেশনের পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি প্যারিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ফর লাইফ, ফুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস থেকে সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়নে পিএইচডি করেছেন।
১৯৭৮ সাল থেকে ইফাদ বাংলাদেশ সরকারকে তার উচ্চাভিলাষী পল্লী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে আসছে। বিগত ৪৫ বছরে ইফাদ ১ কোটি ১০ লাখেরও বেশি পরিবারের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে ৩৭টি প্রকল্পে ৩৯০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে ইফাদের কর্মসূচিরগুলো সবচেয়ে বড়। বর্তমানে ইফাদ বাংলাদেশে ৫১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের চলমান ছয়টি প্রকল্পে ইফাদের বিনিয়োগের অর্থ বিতরণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ইফাদের নতুন কার্যালয় কৌশলগত মাইলফলক: ভাইস প্রেসিডেন্ট