আরও পড়ুন: শিশু ধর্ষণের ঘটনায় চিকিৎসকদের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন: এসপিসহ ১০ চিকিৎসককে তলব
তার আবদেনের ওপর সোমবার শুনানি শেষে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি এবিষয়ে আদেশের দিন ধার্য করেছে আদালত। একই সাথে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার শাহাজান আলী ও তার পরিবারকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
শুনানিকালে আদালত এসপিকে উদ্দেশ করে বলে, ‘পুলিশকে কথা নয় কাজে পটু হতে হবে। কে কোন দলের কোন মতাদর্শের সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। সর্বস্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশ যেন কারো জন্য ভীতিকর না হয় তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বন্ধু হতে হবে। আপনি তো রাষ্ট্রপতি পদক পেয়েছেন, যথেষ্ট জ্ঞান আছে।’
আদালত বলে, ‘পত্রপত্রিকায় যা দেখলাম তাতেতো কুষ্টিয়ার অবস্থা খুবই ভয়ঙ্কর। এমন কর্মকাণ্ড করবেন না যেন নাগরিকরা মনে করে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’
এর আগে এসপির নিঃশর্তের আবেদন করেন আইনজীবী আহমেদ ইশতিয়াক, সাথে ছিলেন মনসুরুল হক চৌধুরী, প্রিজাইডিং অফিসারের পক্ষে ছিলেন অনিক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাহেরুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: এমপি পাপুল পরিবারের অর্থপাচার: বাংলাদেশ ব্যাংকের নথি তলব
গত ২০ জানুয়ারি ‘ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে কুষ্টিয়ার এসপির দুর্ব্যবহার’ র্শীষক একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ এসপিকে তলব করে।
সে অনুযায়ী, রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবদেনপত্র দাখিল করেন এসপি তানভীর।
আবেদনে এসপি এম তানভীর আরাফাত উল্লেখ করেন, তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে চিনতে পারেননি। তাই এমন অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে তিনি দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক হবেন। এ ধরনের ভুল আর কখনও হবে না বলে আবেদনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
আবেদনে কুষ্টিয়ারর এসপি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের জন্য আমার মনে সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিন্দুমাত্র অসম্মান দেখানোর কথা দূরে থাক, বরং বিচার বিভাগের দেয়া কাজে নিয়োজিত হতে পারলে নিজেকে সম্মানিত বোধ করি। এ ঘটনায় আমি মনের গভীর থেকে অনুতপ্ত। আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহসিন হাসানের সাথে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের দুর্বব্যবহারের বিষয়টি অভিযোগ হিসেবে গত ১৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। এর অনুলিপি সুপ্রিমকোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: পুরুষ বলাৎকারকে ধর্ষণের অপরাধভুক্ত করে দণ্ডবিধির ধারা সংশোধন চেয়ে রিট
আবেদনে মো. মহসিন হাসান বলেছেন, ‘কুষ্টিয়া ভেড়ামারা পৌরসভা নির্বাচনে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হই। এরপর ১৬ জানুয়ারি আমার দায়িত্ব পালন অবস্থায় সকাল ১০টায় ভেড়ামারা পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে জনৈক ভোটারের অভিযোগের ভিত্তিতে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করি। সেখানে কতিপয় ব্যক্তিকে কেন্দ্রের বুথের ভেতর লম্বা বেঞ্চে পোলিং এজেন্টদের সাথে বসে থাকতে দেখি। তখন তাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বললে তারা পরিচয়পত্র না দেখিয়ে প্রিসাইডিং অফিসার স্বাক্ষরিত এ ফোর সাইজের কাগজ দেখান।’
আরও পড়ুন: ট্রেনে নারীদের জন্য আলাদা কামরা বরাদ্দ চেয়ে রিট
‘আমি সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারকে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বুথের বাইরে ডাকি। কথা বলা শুরু করতেই ওই ভোটকেন্দ্রে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতসহ ৪০-৫০ জন ফোর্সসহ প্রবেশ করেন। তিনি প্রবেশ করেই প্রিসাইডিং অফিসারকে উচ্চস্বরে তলব করেন। তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মোস্তাফিজুর রহমানসহ কয়েকজন ফোর্স প্রিসাইডিং অফিসারকে আমার সাথে কথা বলতে না দিয়েই তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপাচাপি করেন। তখন আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলি প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে একটি বিষয়ে কথা বলছি। কথা শেষ হলে ওনাকে নিয়ে যান। এরপরেও এএসপি মোস্তাফিজুর রহমান ধমক দিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত আমার দিকে অগ্রসর হন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কে? কী করেন এখানে?’
আরও পড়ুন: অর্থপাচারকারী দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা চেয়েছে হাইকোর্ট
‘আমি আমার পরিচয় দিলে তিনি আরও ক্ষিপ্ত স্বরে বলেন, আপনি এখানে কী করেন? বেয়াদব, বের হয়ে যান এখান থেকে। আমি পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সদের আক্রমণাত্মক চরম অসৌজন্যমূলক ও মারমুখী আচরণে হতচকিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকি। এরপর এসপিসহ তার সঙ্গী ফোর্স আমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে উদ্দেশ্য করে একাধিকবার বলেন, এসব লোককে কে পাঠায়? বেয়াদব ছেলে। এখানে কাজ কী আপনার? বের হয়ে যান এখান থেকে। তারা কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়ার পর আমি বিষয়টি ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করি।’
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আবেদনে আরও বলা হয়, পুলিশ সুপার ও তার ফোর্সের আচরণ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর ৬৯,৭০,৭৪,৮০ ও ৮১ বিধির সরাসরি লঙ্ঘন।