আগামী দুই মাসের (৬০ কার্যদিবস) মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি), পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে এসব নথিপত্র দাখিল করার জন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিন পালনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ নথিপত্র তলবের আদেশ দেন।
রবিবার (১৩ জুন) আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালত অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনার পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে জাতীয় শোক দিবসকে অবমূল্যায়ন ও ক্ষুন্ন করতে ১৫ আগস্টসহ বিভিন্ন দিনে জন্মদিন পালন করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই খালেদার জন্মদিন পালন করছে বিএনপি
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মামুন অর রশিদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার ও অরবিন্দ কুমার রায়। রিট শুনানিতে বিরোধিতা করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুন-অর-রশিদের করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট। গত ৩১ মে তিনি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন দাখিল করেন।
রিটের বিষয়ে আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জন্মদিনের বিভিন্ন তারিখ ব্যবহার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সাথে খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বাস্থ্য সচিবসহ বিবাদীদের প্রতি এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, রিট আবেদনে খালেদা জিয়ার পাঁচটি জন্মদিন ব্যবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। তার এসএসসির নম্বরপত্রে জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৬। বিবাহ নিবন্ধনে জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ৪ আগস্ট ১৯৪৪। ২০০১ সালে নেয়া তার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে জন্মতারিখ ৫ আগস্ট ১৯৪৬। চলতি বছরের মে মাসে তার করোনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে জন্ম তারিখ লেখা আছে ৮ মে ১৯৪৬। এছাড়া জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট তিনি জন্মদিন পালন করেন।
খালেদা জিয়ার জন্মদিনের এই বিভিন্ন তারিখ ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা নিয়েই রিটটি করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী নাহিদ সুলতান যুথি।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক: ফখরুল
খালেদা জিয়ার হার্ট ও কিডনি অ্যাফেক্টেড: ফখরুল
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, ‘আদালত রিটের শুনানি শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তররে থাকা খালেদা জিয়ার নথিপত্র তলব করেছেন। জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টে জন্মদিন পালন করা খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ বিভিন্ন নথিতে ভিন্ন কি-না বা সমন্বয়হীন কেন, মূলত তারই ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত।’
এছাড়াও খালেদার পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে খালেদা জিয়ার জন্মদিন নিয়ে রিট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই যদি অবস্থা হয় তাহলে ১৫ আগস্ট মানুষের জন্মদিন পালন বাতিল ঘোষণা করা হোক।