স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, জুনের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া বন্যায় সারা দেশের মোট ১৬০ উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ওইসব অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি এখনও ভালো হয়নি।
বন্যা দীর্ঘায়িত হওয়ায় কুড়িগ্রাম, মাদারীপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও নেত্রকোনার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বন্যায় জামালপুরে ২৯, টাঙ্গাইলে ২৮, কুড়িগ্রামে ২২, মানিকগঞ্জে ১৭, লালমনিরহাটে ১৫, গাইবান্ধায় ১৫, সিরাজগঞ্জে ১৪, ঢাকা ও নেত্রকোনায় পাঁচজন করে, রংপুর, সুনামগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে তিনজন করে, নীলফামারী, নওগাঁ ও কিশোরগঞ্জে দুজন করে এবং রাজবাড়ী ও শরীয়তপুরে একজন করে মারা গেছেন।
মানুষকে রক্ষায় সরকার বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে ১৫৬৭টি আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করেছে।
এদিকে, সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী বন্যার হটস্পটগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়া উপকূলে বসবাসকারী বিশ্বের ২৫০ মিলিয়ন মানুষ অদূর ভবিষ্যতে বন্যার মুখোমুখি হবে।
ওই সমীক্ষায় বিশ্বজুড়ে ধারাবাহিক বন্যার বিভিন্ন ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব চীন, অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অঞ্চল, বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও গুজরাট, যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ড, উত্তর-পশ্চিম ইউরোপসহ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর জার্মানি।
ঝুঁকির নতুন এ মানচিত্রে বন্যার আগত হুমকির মাত্রা তুলে ধরা হয়েছে।
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ইয়ান ইয়ং বলেন, ‘এটি নীতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে করা একটি গবেষণা, কারণ এটি রাজনীতিবিদদের আমরা যে ঝুঁকিগুলো মুখোমুখি হয়েছি তার একটি নির্ভরযোগ্য অনুমান এবং এ বিষযে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি ভিত্তি সরবরাহ করে।’
তিনি বলেন, ‘এ তথ্য বিশ্বব্যাপী এবং স্থানীয় সরকার পর্যায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য একটি আহ্বান বলা যেতে পারে, যাতে করে উপকূলের জীবন ও অবকাঠামোগত সুরক্ষার জন্য আরও বন্যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা যায় ‘
আগামী ৮০ বছরে বন্যার পরিমাণ প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর ফলে লাখ লাখ উপকূলবাসী বিপদের সম্মুখীন হবে।
মানুষ যদি বেশি পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি জ্বালাতে থাকে এবং প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে তাহলে বিশ্বের আরও কমপক্ষে সাত কোটি ৭০ লাখ মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগামী দিনগুলোতে বন্যায় যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হবে তা বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের ২০ শতাংশ হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, ‘১০০ বছরে একবার ভয়াবহ বন্যার যে দৃশ্য আমরা দেখেছি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখনকার তুলনায় তা দশগুণ বেশি ঘন ঘন ঘটবে।’
তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, চরম বন্যার সংস্পর্শে থাকা জমির পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৮ লাখ বর্গকিলোমিটার বা ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে বিশ্বের ২৫২ মিলিয়ন মানুষ হুমকিতে পড়বে।