বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান লোডশেডিংয়ের মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই পরিস্থিতি খুব বেশি দিন থাকবে না। এ বছরের মধ্যেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানি করা বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাব সব জায়গাতে পড়েছে। কোভিড-১৯ এর ধাক্কা যখন সবাই কাটিয়ে উঠছিল তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি সারা বিশ্বকেই গভীর এক সংকটে ফেলেছে। এই সংকট শুধু উন্নয়নশীল দেশেই না অনেক উন্নত দেশেও এর আঁচ লেগেছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি মার্কেট চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য পণ্যের বাজারও বেসামাল। বৈশ্বিক এই সংকট আমাদেরও বিপদে ফেলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকটের কারণে দেশব্যাপী লোডশেডিং বাড়ছে
নসরুল হামিদ বলেন, আপনারা জানেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির অনন্য মাইলফলক অর্জন করেছে। অর্থাৎ গত এক যুগে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে আমাদের শিল্পায়ন অতীতের সকল সময়কে ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তার ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিবেন। সেই রূপকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুতের কোনো বিকল্প নাই। আমরা সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু যুদ্ধের কারণে হঠাৎ করেই কিছুটা ছন্দ পতন সব জায়গাতেই।
তিনি বলেন, জাপানের মত উন্নত ও অর্থনৈতিভাবে সমৃদ্ধ দেশও তাদের সাড়ে তিন কোটির বেশি মানুষকে নিয়মিত বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারছে না। একই অবস্থা আরেক উন্নত দেশ অস্ট্রেলিয়ারও। ভারত-পাকিস্তানের কথা নাহয় নাইবা বললাম। অর্থাৎ সবাইকেই এই সংকটের সময়ে রেশনিং করতে হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৬০০-১৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। সেখানে আমরা দিতে পারছি মাত্র ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর বেশি গ্যাস আমরা দিতে পারছি না। কারণ আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে কৃষি ও শিল্পখাতকে। কৃষির জন্য সার অপরিহার্য। সার উৎপাদনেও আমাদের অনেক পরিমাণ গ্যাস দিতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাঁশখালীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিস্ফোরণে ২ শ্রমিক আহত
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বাকি বৃহৎ অংশ এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ও গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র দৈনিক ১৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে আমরা উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছিলাম দৈনিক ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা এ সক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের নিজস্ব গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করেছে আমাদের খনিগুলোর রির্জাভ কমে যাওয়ার কারণে।
তিনি বলেন, এলএনজি আমদানির জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় আমরা এলএনজি পাচ্ছি। এর পাশাপাশি আমরা আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করতাম। কোভিড-১৯ এর আগে আমরা এক ইউনিট এলএনজি চার ডলারেও আমদানি করেছি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা ৪১ ডলারও ছাড়িয়ে গেছে। এত উচ্চমূল্যে আমদানি করলে আমাদের অর্থনীতির ওপর বিশাল চাপ তৈরি হবে। শুধু গ্যাসের দামই না। বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। ২০২১ সালের জুলাইয়ে ডিজেল ব্যারেল প্রতি ৭৭ ডলার ছিল; সেটা এ বছরের জুনে ১৭১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০০৮ সালের পূর্বের অবস্থা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের আগে সারাদেশে দিনে ১৬-১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকতো না। সেই কঠিন সময়ে আপনারা শেখ হাসিনার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যুৎ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।
এই সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি। ‘আমরা সবাই মিলে এই সংকট পার করবো।’