চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব সংগ্রহ, রেমিট্যান্স, রপ্তানি বৃদ্ধি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যয় এবং অর্থ সরবরাহসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অবস্থান সন্তোষজনক ছিল।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২০২২-২৩ বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে সংসদে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়েছে, আমদানি-রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে এবং এর ফলে বর্তমান বাজেটে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ যা গত অর্থবছরে ছিল ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে সরকারি ব্যয় ছিল ১১ দশমিক ৯০ শতাংশের বিপরীতে ১১ দশমিক ১৪ শতাংশ, যেখানে এডিপির বাস্তবায়নের হার ছিল আট দশমিক ২৬ শতাংশের বিপরীতে আট দশমিক ৫৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন: আইএমএফের ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ফেব্রুয়ারিতে পাওয়া যাবে: অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবের স্থিতি ঘাটতি ছিল যা ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর-এ রিজার্ভে ৩৬ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে আসে যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৪৬ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল চার দশমিক ৮৯ শতাংশ যা আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ১৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশের বিপরীতে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির ইতিবাচক প্রবণতা আমাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনশীল ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, আমদানি ব্যয় (সিঅ্যান্ডএফ) বেড়েছে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সময়কালের পর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাভাবিককরণ এবং মধ্যস্থতাকারী ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিলাসবহুল আইটেম এড়িয়ে চলা এবং সরকারের কঠোরতা প্রয়োগের কারণে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে।’
২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চার দশমিক ৫৭ শতাংশ কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পাঁচ দশমিক ৫০ শতাংশ ছিল যেখানে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ছয় দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি ছিল পাঁচ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যেখানে ২০২২ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে অসামান্য বলেছে আইএমএফ: অর্থমন্ত্রী
বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে মোস্তফা কামাল বলেন, প্রাক্কলিত ঘাটতি জিডিপির পাঁচ দশমিক ৫১ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নের জন্য দুই দশমিক ২২ শতাংশ সিল আসে বাহ্যিক উৎস থেকে এবং তিন দশমিক ২৯ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে প্রশমিত হবে।
তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতির চাপ সামলাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার আইনি প্রক্রিয়া চলছে: অর্থমন্ত্রী