বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ি প্রথমবারের মতো ভারতীয় ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন) কার্গো জাহাজ দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলায় ভেড়ে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি রিশাদ রাইহান’- নামে এই কার্গো জাহাজটি সোমবার সকালে বন্দরের ৯নং জেটিতে নৌঙ্গর করে।
বাণিজ্যে মোংলা বন্দর ব্যবহার বাংলাদেশ-ভারত চুক্তি অনুয়ায়ী ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে ১ আগস্ট কার্গো জাহাজটি ছেড়ে আসে। ট্রায়াল রানে যুক্ত থাকা ৪টি জাহাজের এটি প্রথম কার্গো জাহাজ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, মোংলা-তামাবিল এবং মোংলা-বিবিরবাজার (কুমিল্লা স্থলবন্দর) রুটে ট্রয়ালের জন্য ট্রানজিট কার্গোটি বর্তমানে মোংলা বন্দরে অবস্থান করছে। পণ্যবাহী ওই কার্গো জাহাজটি মোংলা বন্দরের নোঙ্গর করার মধ্যে দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ট্রায়াল কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবারহ করতে দুই দেশের মধ্যে ২০১৮ সালের অক্টোবরে এই চুক্তি হয়। জাহাজটিতে মার্কস লাইনের দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটি কন্টেইনারে ইলেক্ট্রোস্টিল কাস্টিংস লিমিটেডের ৭০ প্যাকেজে ১৬.৩৮০ টন লোহার পাইপ এবং বিবিরবাজার-শ্রীমন্তপুর সীমান্ত পয়েন্টে ব্যবহার করে আসামের জন্য ও আরেকটি কন্টেইনারে ২৪৯ প্যাকেজে ৮.৫ টন প্রিফোম রয়েছে।
জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে নৌযান থেকে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য খালস কাজ শুরু হয়। ওই নৌযান থেকে সরাসরি খালাস করে কন্টেইনার ও স্টিল পণ্য টার্মিনাল ট্রাক্টরে ওঠানো হয়। এর পর নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টার দিকে সেই পণ্য নিয়ে টার্মিনাল ট্রাক্টরটি সড়ক পথে ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়।
কলকাতা বন্দর থেকে নৌযানে আসা দুটি কন্টেইনারের মধ্যে একটি তামাবিল সীমান্ত হয়ে ভারতে মেঘালয়ে এবং অপর কন্টেইনারটি বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে ভারতের আসামে যাবে।
আরও পড়ুন: প্রথমবার জাপান থেকে ১২৮০টি গাড়ি নিয়ে মোংলা বন্দরে জাহাজ
মোংলা বন্দর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ-ভারত প্রোটোকল রুট অভ্যন্তরীণ জলপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ভারত থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য মোংলা বন্দর ব্যবহার সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং স্ট্যান্ডর্ড অপারেটিং পদ্ধতি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে।
২০২২ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত ১৩তম বাংলাদেশ-ভারত জয়েন্ট গ্রুপ অব কাস্টমস (জেএসসি) বৈঠকের পর ট্রায়াল রান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী মোংলা বন্দর এটি প্রথম ট্রায়াল কার্গো জাহাজ।
ভারতের সহকারি হাইকমিশনার ইনডার জিত সাগর বলেন, ভারত-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুটে অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ব্যবসায়িক গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ওই চুক্তি অনুযায়ী প্রথম ট্রায়ালের পণ্য মোংলা বন্দর দিয়ে খালাস ও পরিবহন শুরু হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা জানান, মোংলা বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সাথে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আজ একটি মাইলফলক সৃষ্টি হলো। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।
‘এমভি রিশাদ রাইহান’- নামে ওই কার্গো জাহাজটি জেটিতে নোঙ্গর করার সময় উপস্থিত ছিলেন- ভারতের সহকারি হাইকমিশনার ইনডার জিত সাগর, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা, মোংলা কাস্টম হাউজের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমানসহ বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পরে তারা জেটি পরিদর্শন শেষে বন্দরের সভা কক্ষে এক আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণসামগ্রী নিয়ে মোংলায় ভিড়েছে প্রথম জাহাজ