প্রথমবারের মত দেশের ১০ সিটি করপোরেশনের মেয়র নগর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামোগত বিভিন্ন দিক, এর চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
এসময় তারা তাদের নিজ নিজ এলাকায় করোনাকালীন এবং করোনাপরবর্তী সময়ে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে অন্তত একজন এপিডেমিওলজিস্টের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন।
বুধবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন (ইউএস সিডিসি) এর যৌথ উদ্যোগে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ও সেফটিনেট কর্তৃক বাস্তবায়িত ‘বাংলাদেশের নগর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি’-এর অধীনে অনুষ্ঠিত ‘মেয়র সংলাপ: নগর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জসমূহ ও উত্তরণের উপায়’-শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেন, মহামারি-অতিমারিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে মহামারি বিশেষজ্ঞের (এপিডেমিওলজিস্ট) গুরুত্ব পুরো বিশ্ব টের পেয়েছে। যার ফলে এক্ষেত্রে আরও বেশি কাজ করার আছে।
পিটার ডি হাস বলেন, ‘কোভিড- ১৯ মহামারি আমাদের দেখিয়েছে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশগুলোতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা। একটি পরামর্শ বারবারই এসেছে- জনস্বাস্থ্য ও মহামারি বিশেষজ্ঞদের স্থায়ীভাবে সিটি করপোরেশন কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা। বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন যে কিভাবে জনস্বাস্থ্য ও মহামারি বিশেষজ্ঞদের ওপর বিনিয়োগ সংক্রামক এবং অসংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে খরচ এবং প্রভাবকে ব্যাপকভাবে হ্রাস করতে পারে। বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে আরও ব্যাপক পরিসরে কাজ করার আছে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
আরও পড়ুন: ডিএসসিসি’র প্রতিটি ওয়ার্ডেই ব্যায়ামাগার করা হবে: মেয়র তাপস
তিনি বলেন, ‘প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের জন্য সিটি করপোরেশনকে আইন দ্বারা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমি যতটুকু জানি সিটি করপোরেশনগুলোতে এপিডেমিওলজিস্ট অন্তর্ভুক্ত করণের জন্য অরগানোগ্রামে একটি প্রস্তাব আমাদের দেয়া হয়েছে, আমাদের কিছু সম্মিলিত অনুমোদন লাগবে। আরবান ও রুরাল হেলথ কেয়ারগুলোকে টেক কেয়ার করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্বপ্রাপ্ত। মেগা হেলথকেয়ার সেন্টার যেমন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটাল- এসব জায়গায় যদি স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কিছুটা ভার বহন করা যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরক্ষে তখন অনেক দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে।’
এই মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ১২টি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাগণ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ, ইউ এস সিডিসি এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. সুসান (নিলি) কায়ডোস-ড্যানিয়েলস, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. শামীম জাহান, সেফটিনেট বাংলাদেশের কান্ট্রি হেড লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ডা. সৈয়দ হাসান আবদুল্লাহ, দেশের শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা এবং সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ ও সেফটিনেট বাংলাদেশের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা।
দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে বাস্তবায়িত ‘বাংলাদেশের নগর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি’-টি জনস্বাস্থ্যগত কৌশলগত পরিকল্পনা, কার্যকারিতা ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক নগর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখে চলছে। এই লক্ষ্যে প্রতিটি নগরে এক জন করে জনস্বাস্থ্য রোগতত্ত্ববিদ সংযুক্ত করা হয়েছে–যারা নগর নেতৃত্বকে যথাযথ গবেষণালব্ধ তথ্যের ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিমালা ও কর্মকাণ্ড গ্রহণে সাহায্য করে চলছে। একইসঙ্গে এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে দুই মাসব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়।
আরও পড়ুন: ভবন নির্মাণে কোড অমান্য হলে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করা হবে: ডিএনসিসি মেয়র
২০ ফিটের কম প্রশস্তের রাস্তার উন্নয়নে কোনো বরাদ্দ নেই: মেয়র আতিক