স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রত্যক্ষ মদদদাতা ছিলেন জিয়াউর রহমান। তার নির্দেশে ঘটানো হয় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড।
রবিবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর কাকরাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্যাতন, অন্যায়-অবিচার, শোষণ, প্রতিহিংসা ও ধ্বংসাত্মকের রাজনীতি করে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ ন্যায়বিচার, মানুষের অধিকার আদায় এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় রাজনীতি করে। এখানেই দুটি রাজনৈতিক দলের পার্থক্য।
তাজুল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধুকে শহীদ করার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা দীর্ঘ ২১ বছর দেশ ও মানুষকে কি দিয়েছে জাতি তা জানে। বাঙালি জাতির ভাগ্যকে নির্বাসন দিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি, বঙ্গবন্ধুর খুনি জিয়াউর রহমান এবং তাদের দোসররা।
মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের পর রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, ব্যাংক বীমা, শিল্প কারখানা সব ধ্বংস হয়েছিল। সদ্য স্বাধীন ধ্বংসস্তূপ দেশকে জাতির পিতা সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করার কাজ শুরু করেন এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাত্র সাড়ে তিন বছরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন। অর্থনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে সক্ষম হন বঙ্গবন্ধু।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছে তারা পাকিস্তানিদের দোসর, রাজকার, আলবদর-আলশামস বাহিনী, স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো অথচ জাতির পিতাকে হত্যার পর কি যোগ্যতার কারণে তাদেরকে উচ্চ পদে আসীন করে সম্মানিত করেছে, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত পতাকা ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে। এসব দেখে মুজিব আদর্শের অনুসারীদের কি বুকে রক্তক্ষরণ হয়নি?
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার হাত ধরেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধুর ২ খুনিকে দেশে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা চলছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলবদের চিহ্নিত করতে নিরপেক্ষ কমিশন: আইনমন্ত্রী
জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার অনেক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনা দেশে ফিরে ক্ষতবিক্ষত দলকে পুনঃগঠন করে দেশ ও মানুষের সেবায় ব্রত হয়ে ক্ষমতায় আসেন এবং তার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়।
দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে এবং শেখ হাসিনার পথ নকশা অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রুপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করেন মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু আদর্শে পরিচালিত বাংলাদেশ এখন আর কারো মুখাপেক্ষীর দেশ নয়, এ দেশ ফকির মিসকিনের দেশ নয়, এ দেশ ঘুরে দাঁড়ানো এক বাংলাদেশ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের আন্দোলন-সংগ্রাম, দেশ স্বাধীন করার পিছনে তার নেতৃত্ব ও অবদানকে অস্বীকার, আদর্শ ও চেতনাকে বিনষ্ট করতে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতি করার অপচেষ্টা করেছে বিএনপি। নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করতে ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত হয় তারা। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বার্ষিকীতে তার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত রাখতে সাধারণ মানুষ, কৃষক-শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে শপথ নেয়ার আহ্বান জানান মো. তাজুল ইসলাম।
এর আগে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬ তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত দুস্থ্যদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ এবং বঙ্গবন্ধু ফটো গ্যালারী উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। এসময়, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্য এবং ১৫ আগস্টে শহীদসহ সকল শহীদদের স্মরণে দোয়া করা হয়।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীষর্ক আলোচনা সভায় মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এলজিইডি ও ডিপিএইচই'র প্রধান প্রকৌশলী, এনআইএলজি’র মহাপরিচালক এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।