মৃতদের মধ্যে দুজন বরিশাল জেলায় এবং বাকি তিনজন খুলনা, রাজশাহী ও মানিকগঞ্জ জেলায়।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে দুজন মারা গেছেন।
মৃতরা হলেন- পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বাসিন্দা জাকির হোসেন (৪৫) এবং নগরীর পুরানপাড়ার মো. দুলালের স্ত্রী নিরু বেগম (৪৫)।
তাদের নমুনাগুলো কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
দুজনের মধ্যে একজন শনিবার মধ্যরাতে এবং অপরজন রবিবার সকালে মারা যান।
শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটের দিকে নিরু বেগমের মৃত্যু হয়। এর মাত্র ১৫ মিনিট আগে ওই রোগীকে শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, রোগীর স্বজনদের কাছে উপসর্গগুলো শুনে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে করোনা ইউনিটে পাঠিয়েছিলেন। করোনা ইউনিটে নেয়ার সাথে সাথে ওই নারীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে মারা যাওয়ার পরপরই স্বজনরা তার মৃতদেহ বাসায় নিয়ে যান।
মৃত ব্যক্তির স্বজনদের বরাতে তিনি আরও বলেন, এই রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনদিন আগে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। পরে বাড়িতে গিয়ে জ্বর, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে শনিবার রাতে শেবাচিমে নেয়া হয়। তার ডায়বেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ ছিল বলেও জানিয়েছেন স্বজনরা।
এছাড়া ডা. হোসেন জানান, শনিবার সাড়ে ৫টায় জাকির হোসেনের স্বজনরা তাকে প্রথমে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যান।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফার করার পর শনিবার সন্ধ্যায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে প্রথমে মেডিসিন ইউনিটে নেয়া হলেও পরে রাতেই করোনা ইউনিটে স্থানান্তর করা হয় এবং রবিবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইইডিসিআর) এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ তাকে দাফনের অনুমতি দিয়েছে বলেও চিকিৎসক জানান।
রোগীর এক স্বজন জানান, মৃত রোগী দীর্ঘদিন যাবত অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
শনিবার দিবাগত রাত পর্যন্ত শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে ছয়জন রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসোলেশনে থাকা সুলতান শেখ (৭০) নামে এক ব্যক্তির রবিবার সকালে মৃত্যু হয়েছে।
নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার আব্দুল গফুর শেখের ছেলে সুলতান গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
খুমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, সুলতান শেখের করোনা ইউনিটে ভর্তি থাকলেও তিনি যক্ষ্মার রোগী ছিলেন।
বিষয়টি ঢাকায় আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, তারা জানিয়েছে তার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। সে কারণে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদও জানিয়েছন, মৃত সুলতান শেখ যক্ষ্মা রোগী ছিলেন।
মানিকগঞ্জে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সুচিত্রা সরকার (২৬) নামে এক নারীর মৃত্যুর পর তার পরিবারকে লাকডাউনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মৃত গৃহবধূ সুচিত্রা সরকার হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের বড়ইছড়া গ্রামের মুদি দোকানদার নিতাই সরকারের স্ত্রী।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’
স্বজনদের বরাত দিয়ে মনিরুজ্জামান আরও বলেন, সুচিত্রা সরকার গত ৭ দিন ধরে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট এবং দুদিন ধরে ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন। হাসপাতালে নেয়ার আগেই ওই মহিলা মারা যান বলে তিনি জানান।
এক সপ্তাহ আগে ওই নারীর শ্বশুর মারা যান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শ্বশুরের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনেক লোক সমাগম হয়েছিল। সেখানে আসা কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কিনা- তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হবে।’
এদিকে শনিবার রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক যুবক মারা গেছেন।
চিকিৎসকরা জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়ে আসা যুবক আল আমিন (২২) মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মারা যাওয়া যুবক আল আমিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের অলঙ্কারদীঘি গ্রামের কৃষক মকলেছুর রহমানের ছেলে।
নিহতের বাবা কৃষক মকলেছুর রহমান জানান, তার ছেলে আগে থেকেই এ রোগে ভুগছে। দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করে আল আমিন। শুক্রবার রাতে আল আমিন গায়ে জ্বর আর কাশি নিয়ে খুব অসুস্থ অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ থেকে নওগাঁর রানীনগর আসে। শনিবার সকালে নিজ বাড়িতে আসার সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রামের লোকজন তাকে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি।
পরে চিকিৎসার জন্য তাকে নওগাঁ সদর ও আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা সেখানে তাকে রাখতে চায়নি বলে তাকে নিজ গ্রামের পাশের ভেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের বারান্দায় রাখা হয়।
তিনি জানান, নওগাঁ সদর হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা চিকিৎসা না দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দেন। এরপর শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের দেয়া কিছু ওষুধ ও ইনজেকশনের পরেও ছেলের শরীরের জ্বর কমছিল না।
পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, আল আমিনকে জ্বর ও কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি মেনিনজাইটিসে ভুগছিলেন।
রাতে নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশে গত ৪৮ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি বলে রবিবার নিশ্চিত করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ফলে দেশে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ অপরিবর্তিত হয়েছে।
সংস্থাটির পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হয়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০৯ নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ ফল পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত মোট ১৫ জন সুস্থ হয়েছে।