টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা শহরের বেশ কয়েকটি নিচু এলাকায় ও সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ৪৮ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর ফলে শহরের বিভিন্ন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে টানা বৃষ্টির ফলে মাথাভাঙ্গা নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে। নিচু এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা বাড়তে পারে।
এই জলাবদ্ধতার কারণে চুয়াডাঙ্গার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা এরইমধ্যে বেশ দুর্ভোগে আছেন। শহরের খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন রিকশা ও ইজিবাইক চালকরা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় যাত্রী কমে যাওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতির আশায় অপেক্ষা করছেন স্থানীয়রা।
চুয়াডাঙ্গা শহরের শান্তিপাড়ার বাসিন্দা মন্টু মিয়া বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বাড়ি থেকে পাড়ার মোড় হয়ে মূল শহরে যাওয়ার রাস্তাটি সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়ার জন্য ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে দূরত্ব বাড়ছে। প্রতি বছর বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’
একই এলাকার স্কুল শিক্ষক উজ্জল বলেন, ‘প্রতিদিনের কাজকর্ম করতে পারছি না। বৃষ্টির পানি ঘরের সামনে জমে আছে, বের হওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। মেয়েরা বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। কেউ পড়তে আসতে পারছে না। প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক হান্নান মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে রাস্তায় মানুষ কমে গেছে। ১০-১১ দিন ধরে বৃষ্টির কারণে তেমন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যা আয় করছি, তাতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’
ইজিবাইক চালক সাগর হোসেন বলেন, ‘ভাড়া এমনিতেই কম, তার ওপর যাত্রীও কম। সারা দিন ইজিবাইক চালিয়ে যা পাই, তাতে তেল কেনার টাকাই ওঠে না। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার কীভাবে চালাব, বুঝতে পারছি না।’
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ‘গত ৪৮ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গায় মোট ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এসময় আকাশে মেঘ থাকলেও সূর্যের দেখা পাওয়া যাবে।’
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহম্মেদ বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে মাথাভাঙ্গা নদীর পানির উচ্চতা বেড়েছে, তবে এ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি। শহরের কিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা তৈরি হয়েছে, যা আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুততম সময়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীর হাটবোয়ালিয়া পয়েন্টে মঙ্গলবার পানির উচ্চতা ২ সেন্টিমিটার বেড়েছে। এখন পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণত পদ্মা নদীর পানি বাড়লে মাথাভাঙ্গা নদীতে পানি বেড়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত পদ্মা নদীর পানি মাথাভাঙ্গা নদীতে আসেনি। পদ্মা নদীর পানি মাথাভাঙ্গায় আসলে পানির উচ্চতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।