টেলিফোনে আড়ি পাতা প্রতিরোধ ও ফাঁস হওয়া আলোচিত কিছু ফোনালাপের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশ হয়নি। এ বিষয়ে আদেশের জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রবিবার আদেশের এই দিন ধার্য করেন। এর আগে রিটের শুনানি নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বর আদালত ১৯ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদেশের জন্য ওঠে।
ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে রিট আবেদনকারীদের রিট দায়ের করার সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রিট দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পরে আদালত ২৯ সেপ্টেম্বর আদেশের জন্য দিন রাখেন। এর আগে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবেন বলে জানান আদালত।
আরও পড়ুন: মাগুরায় আদালতের আদেশ অমান্য করায় ওসিকে তলব
গত ১০ আগস্ট ফোনে আড়ি পাতা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে ফোনালাপ ফাঁসের ২০টি ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন। রিট আবেদনে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সংঘটিত ২০ টি আড়িপাতার ঘটনা উল্লেখ করে তা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সংলাপ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর ফোনালাপ, প্রয়াত সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসানের ফোনালাপ, ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের ফোনালাপ, মাওলানা মামুনুল হকের ফোনালাপ, যশোর-৬ সংসদীয় আসনের সদস্য শাহীন চাকলাদারের ফোনালাপ, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) এর ফোনালাপ, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার ফোনালাপ, সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূরের ফোনালাপ উল্লেখযোগ্য।
আরও পড়ুন: ফোনে আড়িপাতা বন্ধ ও তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট
এসকল আড়িপাতার ঘটনা বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এর আগে টেলিফোনে আড়িপাতা বন্ধের দাবিতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে আইনী নোটিশ পাঠিয়েছিলেন রিটকারীরা। কিন্তু জবাব না পেয়ে তারা রিট দাখিল করেন। রটকারী আইনজীবীরা হলেন-মুস্তাফিজুর রহমান, রেজওয়ানা ফেরদৌস, উত্তম কুমার বনিক, শাহ নাবিলা কাশফী, ফরহাদ আহমেদ সিদ্দীকী, মোহাম্মদ নওয়াব আলী, মোহাম্মদ ইবরাহিম খলিল, জি এম মুজাহিদুর রহমান (মুন্না), ইমরুল কায়েস ও একরামুল কবির।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর এ রিটের শুনানিতে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আড়ি পাতা ও ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। এসব রোধে বিটিআরসির নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ঘটনাগুলো তদন্ত চাওয়া হয়েছে। বেআইনিভাবে কারা এসব করছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক কাজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত
অন্যদিকে, শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, রিট আবেদনকারীরা কেউ ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। আইন অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ আছে। তিনি মামলা করতে পারেন। বিটিআরসির কাছে তাঁর অভিযোগ করার সুযোগ আছে। এখানে সুনির্দিষ্ট বিকল্প প্রতিকারের ব্যবস্থা আছে। আর বিকল্প প্রতিকার থাকলে সে ক্ষেত্রে রিট চলে না। রিট আবেদনকারীদের কেউই সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন। তাঁদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়নি। তাই রিট গ্রহণযোগ্য নয়। আদালত ১৯ সেপ্টেম্বর আদেশের দিন ধার্য করেন সেদিন।