সাংবাদিক, বন্ধু-স্বজন, শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার জ্যৈষ্ঠ প্রতিবেদক হাবীবুর রহমান।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর হাতিরঝিলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৫ বছর। তিনি বাবা-মা, স্ত্রী, আড়াই বছরের শিশুপুত্র, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বুধবার বাদ যোহর ডিআরইউ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে ফুলেল শ্রদ্ধায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। প্রথমেই ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিবের নেতৃত্বে হাবীবুর রহমানের কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে কার্যনির্বাহী কমিটি। এরপর আওয়ামী লীগ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং ও বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তার মৃত্যুতে ডিআরইউ’র পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা সমবেতদের উদ্দেশ্যে ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘হাবীবুর রহমান একজন প্রতিশ্রুতিশীল সাংবাদিক ছিলেন। তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন। অসাবধানতার কারণে এ রকম ভালো মানুষ যেন হারিয়ে না যায়, ভালো সাংবাদিক যেন হারিয়ে না যায়।’
আরও পড়ুন: সাংবাদিক হাবীবের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, ‘আমরা একসাথে ২০১৭ সালে কার্যনির্বাহী কমিটিতে কাজ করেছি। তিনি তখন কার্যনির্বাহী সদস্য। আমি দেখেছি হাবীবুর রহমানের সাংগঠনিক দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠা। তিনি ডিআরইউ’র জন্য ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ।’
ডিআরইউ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে হাবীবুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তারা বলেন, ডিআরইউ আগামী দিনগুলোতেও হাবীবুর রহমানের পরিবারের পাশে থাকবে। শিগগিরই হাবীবুর রহমান স্মরণে একটি শোকসভার আয়োজন করা হবে বলে তাঁরা জানান।
ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদনে আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক শাহনাজ শারমীন, অর্থ সম্পাদক এস এম এ কালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি, দপ্তর সম্পাদক রফিক রাফি, নারী বিষয়ক সম্পাদক তাপসী রাবেয়া আঁখি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামাল উদ্দিন সুমন, তথ্য প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক কামাল মোশারেফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাদিয়া শারমিন, আপ্যায়ন সম্পাদক মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান, কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাবলু, কার্যনির্বাহী সদস্য মাহমুদুল হাসান, সোলাইমান সালমান, সুশান্ত কুমার সাহা, মো. আল-আমিন, এস কে রেজা পারভেজ ও তানভীর আহমেদ।
এছাড়া ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, শাহেদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, মুরসালিন নোমানী; সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাজ্জাদ আলম খান তপু, রাজু আহমেদ, সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, কবির আহমেদ খান ও মসিউর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: হাতিরঝিলে সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক হাবীবুর নিহত
আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ও আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, হাবীবুর রহমান দীর্ঘ সময় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বিট কাভার করতেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুন ও হাসান জাহিদ তুষার, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব মু. আশরাফ সিদ্দিকী বিটু ও এ.বি.এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার এবং সাবেক উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের পক্ষে তার ব্যক্তিগত সহকারী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সাংবাদিক সংগঠনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ বিট পরিবার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বিভাগ সাংবাদিক ফোরাম, রংপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি, কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম ও দিনাজপুর বিভাগ সাংবাদিক সমিতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা শেষে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকেই বেছে নিয়েছিলেন হাবীবুর রহমান। সময়ের আলোতে যোগদানের আগে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক হাবীবের মৃত্যুতে ডিআরইউর শোক
ডিআরইউ’র পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা এবং তার কর্মস্থল দৈনিক সময়ের আলো কার্যালয়ে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হয়। কুমিল্লার জেলার ব্রাহ্মণপাড়ার শশিদল ইউনিয়নের মানোরা গ্রামে চতুর্থ জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।