ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গত ১০ অক্টোবর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পরিচয়ে গাড়ি থেকে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় সাত জেলা থেকে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নতুন খোলা এক্সপ্রেসওয়েতে এটিই ছিল এই ধরনের প্রথম ডাকাতি।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও রবিবার (২২ অক্টোবর) ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর-রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন।
আরও পড়ুন: দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা হুমকি নেই: ডিএমপি কমিশনার
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার কাওলা-ফার্মগেট এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের একদিন পর গত ৩ সেপ্টেম্বর এক্সপ্রেসওয়েটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিবি প্রধান জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ৭ জন হলেন- সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), শাহরুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার দিদার মুন্সি (৩৫), ফেরদৌস ওয়াহিদ (৩৫), আলামিন দুয়ারি দিপু (৪২) ও দাউদ হোসেন মোল্লা (৩৯)।
তিনি আরও জানান, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, নকল র্যাবের জ্যাকেট, হাতকড়া, খেলনা জাতীয় পিস্তল, ওয়্যারলেস ও মোবাইল ফোন সেট, লুট হওয়া টাকার সঙ্গে আনা গয়না জব্দ ও নগদ ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আসছিল। এমনকি তারা ব্যবহৃত যানবাহনের নেমপ্লেট পরিবর্তন করে এবং মোবাইল ফোন সেটও নষ্ট করে।
গত ১০ অক্টোবর বিকাল ৩টার দিকে উত্তরার একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৮৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন ব্যবসায়ী সোহেল আহমেদ সুলতানের বিজনেস অ্যাকাউন্ট্যান্ট অনিমেষ চন্দ্র সাহা।
এর মধ্যে সোহেলের ব্যবসায়িক অংশীদার জাফর ইকবালের প্রতিনিধি রাজন নামে একজনকে ব্যাংকে ৩৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
পরে অনিমেষ ও আরেক কর্মচারী শাহজাহান তাদের নিজস্ব গাড়িতে করে উত্তরা থেকে বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে বনানীর দিকে যাচ্ছিলেন।
ডিবি প্রধান জানান, বিকাল ৪টার দিকে খিলক্ষেত ডেন্টাল কলেজসংলগ্ন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে একটি মেরুন প্রাইভেটকার হঠাৎ করে অনিমেষের গাড়ি থামায়।
আরও পড়ুন: মেট্রোরেলে যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে এমআরটি পুলিশ: ডিএমপি কমিশনার
র্যাবের ইউনিফর্ম পরিহিত পাঁচ-ছয়জন লোক মেরুন গাড়ি থেকে নেমে অনিমেষকে জানায়, তাদের গাড়িতে অস্ত্র রয়েছে, ডাকাতরা চোখ বেঁধে অনিমেষ, শাহজাহান ও তাদের চালক আবুল বাশারকে হাতকড়া পরিয়ে দেয়।
ডাকাতরা গাড়ি থেকে ৪৮ লাখ টাকা, একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন সেট লুট করে ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ঘুরে ৩০০ ফুট এলাকায় ফেলে রেখে যায়।
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী সোহেল বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ডিবি সদস্যরা সিসিটিভি ফুটেজ, বাদীর জবানবন্দি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাতদের শনাক্ত করে।
হারুন বলেন, সবুজের নেতৃত্বে ডাকাতি সংঘটিত হয় এবং লুট হওয়া টাকা ডাকাতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
ডাকাতরা ওই টাকা বাড়ি ভাড়া, স্ত্রীর জন্য স্বর্ণ কেনা ও জুয়া খেলার কাজে ব্যবহার করে এবং আদালতে লড়ার জন্য আইনজীবীদের ফি হিসেবে টাকা রাখে জানিয়ে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ডাকাত দলের সঙ্গে র্যাবের কোনো সদস্য জড়িত কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা সেরকম কাউকে খুঁজে পাননি, তবে একটি মামলা পরিচালনার সময় এই চক্রের সঙ্গে যোগ দেওয়া আদালতের মাহুরিকে পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ ১৩টি জেলায় ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, মাদকসহ ১০ থেকে ১৫টি মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে কেউ সহিংসতার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার