দেশে আর কোন টিকার ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাষ্ট্র। করোনা মোকাবিলায় চীন সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে বন্ধুর মতো হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আজকের চীন-বাংলাদেশ ভ্যাক্সিন চুক্তির মাধ্যমে দেশে টিকার ঘাটতি মেটাতে চীন আরেকবার তার বন্ধুত্বের গভীরতা প্রমাণ করেছে। এই চুক্তি দেশের জন্য এক বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিসিপিএস অডিটোরিয়াম হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত চীনের সিনোফার্ম টিকা যৌথভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ।
তিনি বলেন, দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে আজকের এই চুক্তি বিরাট ভূমিকা পালন করবে এবং দেশে আর কোন টিকার ঘাটতি থাকবে না। তবে টিকা উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি শুরুর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ চীন, রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য টিকা উৎপাদনকারী দেশের কাছ থেকে টিকা গ্রহণ কাজ চলমান রাখবে।
চীন-বাংলাদেশ ভ্যাক্সিন চুক্তির ফলে বাংলাদেশ খুব তাড়াতাড়ি দেশেই টিকা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। টিকার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান, ‘দেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রায় তিন কোটি ডোজ টিকা চলে এসেছে। যা থেকে প্রথম ধাপে দেড় কোটি ডোজ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৫৪ লাখ ডোজ মানুষ গ্রহণ করেছে। অবশিষ্ট এক কোটি ডোজ টিকা এই মুহুর্তে দেশে মজুদ আছে। এ মাসের ২২ তারিখের পর চীন থেকে সিনোফার্মের আরো ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাক্সিন দেশে আসবে। চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকেও আরও টিকা নেয়া হবে। সুতরাং টিকা নিয়ে আগামীতে আরো কোন ঘাটতিতে থাকবে না বাংলাদেশ।
দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার অর্থ হচ্ছে ১৩ কোটি মানুষের জন্য মোট ২৬ কোটি টিকা প্রস্তুত রাখতে হবে। এই বিশাল সংখ্যক টিকার চাহিদা পুরণ করতে চীনের সাথে বাংলাদেশের আজকের এই চুক্তিটি অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের সাথে চুক্তিসহ করোনা মোকাবিলায় সকল কাজে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ধন্যবাদ জানান।
আরও পড়ুন: আইভিআইয়ের সহযেগিতায় দেশেই টিকা উৎপাদন সম্ভব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, চীনের সাথে এই ভ্যাক্সিন কার্যক্রম শুরু করতে সরকার দিনরাত নিরলস কাজ করেছে। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। এই চুক্তির ফলে এখন থেকে বাংলাদেশেই করোনা টিকা উৎপাদন হবে এবং খুব দ্রুতই দেশে মানুষের আবারও স্বাভাবিক জীবন যাত্রা শুরু হবে।
উল্লেখ্য, দেশেই চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন উৎপাদনের লক্ষ্যে সোমবার বেলা ৩ টায় রাজধানীর মহাখালীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন (বিসিপিএস) মিলনায়তনে চীনের সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং দেশের অন্যতম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড এর মধ্যে এক সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
আরও পড়ুন: আগস্টেই আরও এক কোটি ডোজ টিকা আসছে
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং, ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান, ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দল মুক্তাদির। স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
এছাড়াও বেজিং থেকে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স বিভাগের উপ-মহাপরিচালক চেন সং, সিনোফার্ম এর চেয়ারম্যান লিউ জিংযান এবং স্বাগত বক্তব্য দেন করেন সিনোফার্ম এর চীফ ইঞ্জিনিয়ার ফু কুয়াং।
অনুষ্ঠানে চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন বাংলাদেশ যৌথভাবে উৎপাদনের লক্ষ্যে সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিনের পক্ষ থেকে যথাক্রমে সমঝোতা স্বাক্ষর করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জাহিদ মালেক, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এবং ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেড ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুল মুক্তাদির।