লিবারেল আর্টস ইউনিভার্সিটির (ইউল্যাব) সাথে সোমবার সন্ধ্যায় ‘হি ফর সি’ র্শীষক এ ওয়েবিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
ইউল্যাবের সাবেক উপাচার্য এবং ইউল্যাব বিজনেস স্কুলের বোর্ডের বিশেষ উপদেষ্টা ইমরান রহমান এবং শিল্পপতি ও পরহিতৈষী আক্তার মতিন চৌধুরী ওয়েবিনারটিতে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
অ্যাডভোকেসি চেয়ারপারসন তুতলি রহমানের সঞ্চালনায় বৃহত্তর ঢাকার জোন্টা ক্লাবের সভাপতি ড. সিমেন আক্তারও আলোচনায় অংশ নেন।
ওয়েবিনারে নারীর প্রতি সহিংসতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আক্তার মতিন চৌধুরী বলেন, ‘স্ট্যালিন বলেছিলেন একজনের মৃত্যু একটি ট্র্যাজেডি। যখন মৃত্যুসংখ্যা লাখ ছাড়ায় তা পরিসংখ্যান হয়ে যায়- এবং ইতিহাসে নারীর প্রতি সহিংসতা এত বড় আকার ধারণ করেছে পরিসংখ্যানকেও হার মানিয়েছে। ইতিহাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবেও গণ্য করা হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত, আমরা এখনো ইতিহাসের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। যদিও ঘটনার ধারাবাহিকতা পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।’
নারীদের প্রতি সহিংসতার সাংস্কৃতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না ড. সিমেন আক্তারের এমন প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিহাসে কি দেখতে পাই, আইনে প্রণয়নের মাধ্যমে সম্পত্তিতে নারীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে, পুরুষরা পাশাপাশি অনেক নারীরাও এতে বিশ্বাস করছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো সময়ের সাথে সাথে পুরুষের চেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল’ ভাবার মানসিকতা নারীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। পুরুষদের অধীনে থাকাকে নারীরা মহৎ কাজ বলে মনে করেন।’
তিনি বলেন, পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্বের মনমানসিকতাই তাদেরকে ধর্ষণের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নরীরা শুধু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না। সেই সাথে তাদের মর্যাদাও ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে। আইন তৈরি করা অনেক সহজ, তবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে বছরের পর বছর লেগে যায়।
সহিংসতা ও ধর্ষণের অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড দেয়াই এ সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান নয়। তবে, এই মামলাগুলোর আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাজা দেয়ার আগে তাদের যৌন ইচ্ছা দমন করা উচিত কারণ তার ভুক্তভোগীর সম্মানহানি করে থাকেন। ধর্ষণকারীদের জন্য এটাই চূড়ন্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’
ধর্ষণের সহিংসতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে দ্বিতীয় আলোচক ইমরান রহমান ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার উপর গুরুত্বারোপের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তথাকথিত ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, যিনি শতাধিক ধর্ষণ করেছেন বলে গর্ব করে বলেছিলেন। শাস্তি হিসেবে কেবল তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছিল। তথাকথিত শিক্ষিত যুবকরা এখনও বিশ্বাস করে ধর্ষণের শিকার হওয়ার জন্য ধর্ষিতা এমনকি অনেক ভুক্তভোগীরা বিশ্বাস করে যে তাদের কিছু ভুলের কারণে তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গণমাধ্যমগুলোও অনেক ক্ষেত্রে ভিকটিমের সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে ভুক্তভোগীদের গোপনীয়তার বিষয়টি প্রকাশ করে দিচ্ছেন।’
নিউজ এজেন্সি ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি) মিডিয়া এবং কসমস ফাউন্ডেশন ওয়েবিনারের টেকনোলজি পার্টনার ছিল। ওয়েবিনারটি ইউএনবির ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়।
বৃহত্তর ঢাকার জোন্টা ক্লাবের ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে তিনটি ওয়েবিনার, একটি টিভি টক শো এবং একটি রেডিও অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
আগামী ৫ ডিসেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ৭১’ এ লিঙ্গ সমতার ওপর একটি টক শো অনুষ্ঠিত হবে। এতে জোন্টা ক্লাবের ড. জারিন দেলোয়ার অতিথি বক্তা হিসেবে অংশ নেবেন।
আগামী ৯ ডিসেম্বর রাত ৮টায় কসমস গ্যালারির সাথে যৌথভাবে তৃতীয় ওয়েবিনারটি হবে ‘সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ এর ওপর। এতে তিনজন বিশিষ্ট শিল্পী অংশ নেবেন।
গ্যালারি কসমসের পরিচালক তেহমিনা এনায়েতের মতে, বিশিষ্ট শিল্পীদের শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কিভাবে প্রতিবাদ করা যায় তাই তুলে ধরা হবে। এর মাধ্যমে দর্শকরাও জানতে পারবেন কিভাবে এগুলোকে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে তুলে ধরা যায়।
কন্যা শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অবসানের জন্য সচেতনতা বাড়াতে ২০১২ সালে ‘নারীর প্রতি সংহিংসতায় বন্ধে জোন্টা’ শীর্ষক কর্মসূচি শুরু করেছিল জোন্টা। ২০২০ সালের ক্যাম্পেইনে জোন্টা ক্লাব ও স্বতন্ত্র সদস্যদের নতুন নতুন ধারণা নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।