‘আগে আমরা এক থেকে চার দিন পর্যন্ত বিশাল এই নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য ফেরিতে বসে থাকতাম, অন্যদিকে সেতু নির্মাণের পর আমরা এখন মাত্র পাঁচ মিনিট সময় ব্যয় করি। আমরা সত্যিই অনেক উপকৃত হচ্ছি’- বাংলাদেশি বাসচালক মো. রেজাউল ইসলাম সম্প্রতি পদ্মা সেতু পারাপারে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সিনহুয়াকে এ কথা বলেছেন।
রেজাউল ইসলামের উল্লেখিত সেতুটি হল পদ্মা সেতু। যেটি চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড নির্মাণ করেছে।
২০২২ সালের জুন মাসে জনসাধারণের জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়। যা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক ডজন জেলা এবং রাজধানীর মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করেছে। সেতু নির্মাণের আগে বিশাল এই পদ্মা নদী পার হওয়ার ভরসা ছিল ফেরি বা লঞ্চ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ভাইস ম্যানেজার শি সেকিয়াং এর মতে, ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৬ মিলিয়ন যানবাহন সেতুটি ব্যবহার করেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ হাজার যানবাহন।
বাসচালক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা টাকা এবং সময় বাঁচানো সহ অনেক সুবিধা পেয়েছি। আমরা মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যে ফিরতি ট্রিপ করতে পারি।’
আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমি খুবই খুশি, কারণ আমার বাড়ি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে। আগে যেতে আমাদের দুই দিন লেগে যেত, কিন্তু এখন আমি মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছাতে পারি, তাই আমি দারুণ খুশি।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথে চলল পরীক্ষামূলক পণ্যবাহী ট্রেন
মতিন আরও বলেন, ‘চীনা কোম্পানিকে অনেক ধন্যবাদ। এই পদ্মা সেতুটি অনেক কষ্টের ফসল। আমি আশা করি ভবিষ্যতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার কথা সেগুলো বাস্তবায়িত হবে এবং যথাযথভাবে পরিচালিত হবে।’
সেতুটির নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে দলটিতে ৪জন চীনা এবং ১৫১ জন বাংলাদেশি নাগরিক সহ মোট ১৫৫ জন শ্রমিক রয়েছে।
প্রকল্পের অপারেশন ম্যানেজার বরুন চাকমা তাদের একজন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যা কাজ করছি তা একটি বিপুল কর্মযজ্ঞ। বিশাল সেতুটির নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য আমাদের চারপাশে নজর রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ, কিন্তু তারা (চীনা কোম্পানি) এখন পর্যন্ত খুব ভালো করেছে।
বরুন চাকমা বলেন, ‘পদ্মা সেতু একটি ঐতিহাসিক সেতু। এটি আমাদের পরিবহন খাত এবং অর্থনীতির উন্নয়নের দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে।’
বরুন বলেন, ‘এই সেতুর নির্মাণকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি গর্বিত।’
চীনা প্রকৌশলীরা সেতুটির নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ শুধুমাত্র স্থানীয় সড়ক ট্রাফিকের বর্তমান পরিস্থিতি এবং জনগণের জীবনযাত্রার মানকে কার্যকরভাবে উন্নত করে নি, অনেক বাংলাদেশি শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দিতেও সহায়তা করে।
মো. সোহেল রানা ২০১২ সালের জুন থেকে এই প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পরীক্ষামূলক চলাচল: ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌঁছেছে ট্রেন
সোহেল বলেন, ‘প্রথমে এই কাজটি কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না।’
তিনি আরও জানান, তিনি কংক্রিট ব্লক, বিটুমিন এবং সিমেন্ট পরীক্ষা সহ হাতে কলমে চীনা প্রকৌশলীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন, সেতুটিকে কেন্দ্র করে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্ক নির্মাণ করা হবে। এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে।
একই সময়ে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রথম অংশ ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। অক্টোবরে বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার শুরু হবে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যানেল হিসেবে কাজ করবে, যা ঢাকা এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ২০টিরও বেশি জেলাকে সংযুক্ত করবে।
এটি আঞ্চলিক সংযোগ এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ব্যাপকভাবে উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত দেখানো ইতিবাচক প্রভাবের কারণে, বিশ্বাস করা হচ্ছে যে পদ্মা সেতু মানুষের জীবিকাকে আরও উপকৃত করতে পারে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধারার পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক চালু হলো ইলেকট্রনিক টোল আদায় ব্যবস্থা