পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার (খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি) সকল লাইসেন্সবিহীন ইটভাটার কার্যক্রম সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’র এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি ফাতেমা নজীবের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
রুলে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন স্থানে লাইসেন্সবিহীন পরিচালিত সব ইটভাটা বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা পরিচালনার জন্য ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ এর ধারা ৪, ৫, ১৪ ও ১৮ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। পরিবেশ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সশ্লিষ্ট তিন জেলার ডিসি, এসপিসহ মোট ২৪জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আবারও ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় যেতে হবে: প্রধান বিচারপতি
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। এসব ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও বনের গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মর্মে বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশিত হলে জনস্বার্থে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট পিটিশন দায়ের করে।
শুনানিতে বাদী পক্ষের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) এর ৪ ধারা অনুসারে কোনো ইটভাটা লাইসেন্স ছাড়া চলতে পারবে না। চালালে ধারা ১৪ অনুসারে দুই বছরের সাজার বিধান আছে। তা সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার লাইসেন্সবিহীন পরিচালিত সব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাছাড়া উক্ত আইনের ৫ ধারায় পাহাড়ের মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং তা করলে একই আইনের ১৫ ধারায় দুই বছরের সাজার বিধান রয়েছে। তারপরেও পাহাড়ের মাটি ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ কারণে পার্বত্য এলাকার অনেক পাহাড় ধ্বংস হচ্ছে এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি হয়েছে। বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে প্রশাসনের চোখের সামনে লাইসেন্সবিহীন ইটভাটাগুলো পরিচালিত হচ্ছে- যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
আরও পড়ুন: সপ্তাহে ৪ দিন ভার্চুয়ালি চলবে চেম্বার আদালত
আদালত শুনানি শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অন্যদেরকে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে পরিচালিত সকল লাইসেন্সবিহীন ইটভাটা আগামী সাত দিনের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত অপর এক আদেশে লাইসেন্স ব্যতীত পরিচালিত সব ইটভাটার তালিকা আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে প্রস্তুত করে আদালতে এভিডেভিট দাখিলের জন্য তিন জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম এলাকার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকসহ অন্যদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।