নারীদের নিয়ে বিতর্কিত ও অশালীন মন্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান।

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র তথ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।’

সম্প্রতি মুরাদ হাসান সোশ্যাল মিডিয়ায় এক সাক্ষাৎকারে নারীদের প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্যের জন্য বিভিন্ন মহলে সমালোচনার মুখে পড়েন। তার অশালীন মন্তব্য সম্বলিত বেশ কয়েকটি অডিও এবং ভিডিও গত কয়েকদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

আরও পড়ুন: মুরাদের আপত্তিকর অডিও সরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

অভিনেতা ইমন ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সঙ্গে মন্ত্রীর দুই বছর আগের একটি ফোনালাপ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই অডিও ক্লিপে মন্ত্রী অভিনেত্রীকে ‘অপমানজনক মন্তব্য’ হুমকি এবং অশালীন প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

সোমবার রাতে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের তাঁর বাসভবনে ডা. মুরাদ হাসানের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।

তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে এবং আমি রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছি।

আরও পড়ুন: তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

এছাড়া নারী, মানবাধিকারকর্মী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নারীদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার নিন্দা জানিয়ে মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

সোমবার তথ্য প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসানকে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল বিএনপি। নারী ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে  করা তার ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অবমাননাকর’ মন্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছে দলটি।

এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।

এসময় তিনি বলেন, ড. মুরাদ হাসানকে জনসমক্ষে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় উপযুক্ত সময়ে তাকে যোগ্য জবাব দেয়া হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রতিমন্ত্রীর ‘বিকৃত, অশালীন ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্যে’র বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া প্রতিমন্ত্রীর ‘বিকৃত, অশালীন ও নারীবিদ্বেষী মন্তব্যে’র বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল।

আরও পড়ুন: তথ্য প্রতিমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চায় বিএনপি

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, জাতীয় পতাকা বহনকারী একজন ‘পাগল’ ব্যক্তির এ ধরনের অবমাননাকর মন্তব্যে সমগ্র জাতি হতবাক।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে প্রতিমন্ত্রী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘জারজ’ আখ্যা দেন এবং তারেকের মেয়ে জাইমা রহমান প্রতি রাতে একজন কালো মানুষের সঙ্গে ছাড়া ঘুমাতে পারেন না বলে অভিযোগ করেন।

আপত্তিকর অডিও সরাতে হাইকোর্টের নির্দেশ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের সকল ধরনের আপত্তিকর অডিও ও ভিডিও সরিয়ে নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মঙ্গলবার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ বিটিআরসিকে এই নির্দেশনা দেন। একই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অডিও-ভিডিও সরাতে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমারকে আগামীকাল বুধবারের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: প্রতিমন্ত্রী মুরাদের পদত্যাগ চায় বিএনপি

ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন আদালত।

আবেদনে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন দাবি করেন, এই ধরনের ‘অশ্লীল অডিও ও ভিডিও’ সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর উচিত ছিল এই অডিও ভিডিওগুলো সরানো। কিন্তু তারা তা না করায়, আমি জনস্বার্থে হাইকোর্টের নির্দেশনা চেয়েছে।