প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার প্রযুক্তির যুগে বাঙালি সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে বিকাশের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির যুগে আমাদের শিশুদের মানসিকতা পরিবর্তন হচ্ছে। সুতরাং, তাদের চিন্তাভাবনা ও চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের সংস্কৃতিকে বিকাশ করতে হবে; যাতে তারা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিকে ভুলে না যায়।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘আমাদের অনন্যতা আছে। আমাদের এর স্বতন্ত্রতা রক্ষা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে তিনি পাবলিক লাইব্রেরি অধিদপ্তরের বহুতল ভবনসহ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ছয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।
এছাড়াও, তিনি বাংলাদেশের কপিরাইট অফিসের জন্য শহরে নবনির্মিত ১২ তলা কপিরাইট ভবনের উদ্বোধন করেন।
আরও পড়ুন: সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করলেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং শিল্প-সাহিত্য সংরক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে সংস্কৃতিমনা, সৃজনশীল ও মেধাবী জাতি গঠনে কাজ করে যাবে।
তিনি আরও বলেন যে ‘এখন প্রযুক্তির বিশ্ব। তাই আমরা আমাদের প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদানের পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞানসমৃদ্ধ একটি আধুনিক জাতি গঠনের লক্ষ্যে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুশীলনে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাই।’ এ বিষয়ে কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহিত্য, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, শিল্পকলা, সৃজনশীলতা ও প্রকাশনাসহ বাংলা ভাষার প্রতিটি শাখাকে সমৃদ্ধ ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে সরকার বাংলা ভাষার প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিটি জেলায় সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন করে, যা তৃণমূলের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের পথ প্রশস্ত করে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এখন আর পিছিয়ে নেই। সারা বাংলাদেশে ওয়াইফাই সংযোগ রয়েছে। তার সরকার প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এখন ইউনিয়ন পর্যায়েও মানুষের অবস্থা আমূল পরিবর্তন হয়েছে।
তৃণমূলের মানুষের কাছে সাংস্কৃতিক চর্চা পৌঁছে দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের তৃণমূলে অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে। আমাদের তাদের প্রচার করতে হবে এবং জাতীয় মঞ্চে তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। তাই আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চাকে শুধু জেলা পর্যায়ে না রেখে তৃণমূল পর্যায়েও নিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উদার মনের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার। সুতরাং, এই মানসিকতা ও চেতনাকে আরও বিকাশের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন: আ. লীগ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রমাণ দিয়েছে: ৫ সিটি মেয়রের শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চাকে সমৃদ্ধ ও ঋদ্ধ করতে অনেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি করছি। সুতরাং, আমরা একইভাবে সাংস্কৃতিক চর্চা এবং বুদ্ধিবৃত্তিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাব।’
অন্য পাঁচটি প্রকল্প হলো-পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেন, ঢাকায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট ভবন, কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শিল্পকলা একাডেমি ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং জাতীয় জাদুঘরে শিশু গ্রন্থাগার।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক খলিল আহমেদ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার লক্ষ্য: টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী