ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসন নিয়ে আলোচনার জন্য অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষদের এক বিশেষ বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ।
মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দায় ওআইসির জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের সদর দপ্তরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকে যোগ দিতে তুরস্ক থেকে জেদ্দায় যান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান।
এর আগে সোমবার এই অধিবেশনের জন্য প্রস্তুতিমূলক সিনিয়র অফিসিয়ালস মিটিং (এসওএম) অনুষ্ঠিত হয়।
জেনারেল সেক্রেটারিয়েটের বক্তৃতায় ফিলিস্তিন ও আল-কুদস বিষয়ক সহকারী মহাসচিব রাষ্ট্রদূত সামির বকর বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইসরায়েলি বাহিনী ভয়ংকর গণহত্যা চালায়। যেখানে খাদ্য সহায়তা পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল শত শত মানুষ, সেখানে তাদের জীবন হারাতে হয়।
আরও পড়ুন: ইসরায়েলি আগ্রাসন বিষয়ক ওআইসির বৈঠকে যোগ দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
বকর বলেন, এই গণহত্যা ইসরাইলি দখলদার সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের উদাহরণ ও সাক্ষী। এর জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে আইনি প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করা প্রয়োজন। ইসরায়েলি দখলদারিত্বের জবাবদিহি নেওয়ার জন্য বৈধ ও কার্যকর স্থান এই দুই আদালত।
বকর আরও বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেভাবে নৃশংস অপরাধ ও গণহত্যা চালাচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও কার্যকর আন্দোলনের প্রয়োজন রয়েছে। এই নৃশংস ইসরায়েলি আগ্রাসন মোকাবিলা করতে ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর সৌদি আরবের রিয়াদে যৌথ আরব ও ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত রেজুলেশন বাস্তবায়নে রাজনৈতিক, আইনি ও গণমাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব বৈধ উপায়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আজ (মঙ্গলবার) ওআইসির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বৈঠকে খসড়া নীতিমালা জমা দেবে এসওএম।
ওআইসি মহাসচিব হিসেন ব্রাহিম তাহা ওআইসি বৈঠকের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেবেন।
আরও পড়ুন: গাজায় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরব রিয়াদে আরব ও ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে যৌথভাবে ওআইসি ও আরব রাষ্ট্রগুলোর লীগ।
এ সম্মেলনে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে রয়েছে সদস্য রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত কমিটির রাজধানীগুলোতে ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় সফর।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিনে নৃশংস ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করার অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, ১৮ অক্টোবর ওআইসির সদর দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১-৩ মার্চ তুরস্কে আয়োজিত আনতালিয়া কূটনীতি ফোরামে অংশ নিয়ে এই অনুষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক সংলাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
ফোরামে হাসান মানবতা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের জন্য ইসরায়েলকে দায়বদ্ধ করে গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে, গাজায় সহিংসতা ও নৃশংসতা বন্ধে পর্যাপ্ত বৈশ্বিক পদক্ষেপের অভাব তুলে ধরেন হাসান।
সংঘর্ষে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ, বিশেষ করে নারী ও শিশুর মতো বেসামরিক লোকদের মৃত্যুর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গাজায় যা ঘটছে তা কেবল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। শুধু মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ নয়, জাতিগত নিধনও চলছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ‘যুদ্ধ ও গণহত্যা’ বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না বরং ইসরায়েল যুদ্ধের সমস্ত নিয়ম লঙ্ঘন করছে।
আরও পড়ুন: তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে হাছান মাহমুদের বৈঠক
তুরস্কের ফোরামে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে এই নৃশংসতা মোকাবিলায় সমবেত বিশ্ব সম্প্রদায়কে অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান হাসান।
ভিডিও সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি গাজায় এই নৃশংসতা, জাতিগত নিধন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বন্ধ করতে এবং ইসরায়েলকে থামাতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলতে পারি।’
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের পৃষ্ঠপোষকতায় ফোরামটি ৩ মার্চ শেষ হয়।
‘অ্যাডভোকেসিং ডিপ্লোম্যাসি ইন টাইমস অফ টারময়েল’ প্রতিপাদ্যে এবারের ফোরামে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন সেক্টরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
আরও পড়ুন: ন্যাম সম্মেলন: ফিলিস্তিনিদের সমর্থন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর