পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে খুনিরা যখন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করে, তখন পৃথিবীর কোনো দেশ মানবতার গান গায়নি।
তিনি আরও বলেন, সেই মৃত্যুতে শোক বার্তাও পাঠায়নি। আজকে বিভিন্ন দেশ মানবতার জন্য হুঙ্কার দেয়। কিন্তু এতোগুলা মানুষকে যে হত্যা করা হয়েছিল তখন কারো মুখে কোনো কথা শোনা যায়নি।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ অডিটোরিয়ামে জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইনডেমনিটি আইনের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না এমন কালো আইন তখন করা হয়েছিল। খুনির বিচার করা যাবে না, এমন কালো আইন পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও আছে বলে আমার জানা নাই।’
ড. মোমেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর সংগ্রামের পর, সরকারে আসার পর, এই কালো আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করে জাতিকে কলঙ্ক মুক্ত করেন।’
আরও পড়ুন: বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের সন্ত্রাস ও দুর্নীতি ফিরলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: মোমেন
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জেলের ভেতরে জাতীয় ৪ নেতাকেও হত্যা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল- স্বাধীনতার চেতনায় যারা বিশ্বাস করে তাদের সম্পূর্ণভাবে মূলোৎপাটন করা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যেসব দল আছে তারা সন্ত্রাস ও খুনখারাবিতে বিশ্বাস করে এবং তারা যখন সরকারে এসেছে তখন তারা এই কাজটাই করেছে।’
বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে দেশের চিত্র তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১-২০০৬ সালে দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটে। সরকারি মদদে বাংলা ভাইয়ের উত্থান ঘটে। প্রকাশ্যে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে মানুষ হত্যা করে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমাবাজি করে। আদালতে বিচার চলাকালীন বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করে। বিদেশি একজন রাষ্ট্রদূত সিলেটে মাজারে গিয়েছেন, সেখানেও গ্রেনেড হামলা করে এবং পুলিশসহ তিনজন নিহত হন। রাষ্ট্রদূতসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।’
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি বিরোধী সমাবেশ চলাকালে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। সে ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন, প্রায় ৩০০ জন আহত হন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ওই রকম সন্ত্রাসের দেশ আর দেখতে চাই না। বিএনপি-জামায়াতের সরকার আমরা চিনি।
তিনি বলেন, ১৯৭৫-এর আগে যেভাবে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল সাম্প্রতিক কালেও সেরকম ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যদি আমরা সন্ত্রাসীদের হাতে দেশকে তুলে দিতে না চাই, জিহাদিদের হাতে তুলে দিতে না চাই, দুর্নীতিবাজদের হাতে তুলে দিতে না চাই তাহলে আমাদের প্রত্যেকের একটি দায়িত্ব আছে। ২০০১-২০০৬ সালে দেশের অবস্থা কেমন হয়েছিল তা সবাইকে জানান।’
তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যদি আপনার সন্তানের নিরাপদ ভবিষ্যৎ চান তাহলে শেখ হাসিনার সরকারকে আবার জয়যুক্ত করবেন।
বাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সিদ্ধান্ত আপনাদেরই নিতে হবে বলে উল্লেখ করেন ড. মোমেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সাংসদ মনিরুল ইসলাম মনি, সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি আইনজীবী ড. মশিউর মালেক, তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি ড. হারুন অর রশিদ।