বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান- ২০২২ উপলক্ষ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকাস্থ খুলনা বিভাগীয় আইনজীবী সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, নানা কারণে বর্তমানে বিচার ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা বেড়েছে। আমাদের সচেতনতা ও কর্মনিষ্ঠায় মামলা জট কমে, হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী ন্যায় বিচার পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারে।
হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ পুনর্গঠনের বিষয়ে প্রদান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বেঞ্চ গঠন করতে গেলে আমাকে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। এখনও কজ লিস্টে আশির দশকের ৯০ দশকের মামলা তালিকায় আসে। এরপর ২০০০ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে মামলা তালিকায় আসে।
অনেক মামলা আছে যেটা ৪০ বছর পর্যন্ত পেন্ডিং আছে। মানুষ বিচারের আশায় আদালতে কত দিন ঘুরবে? এভাবে ঘুরতে ঘুরতে যদি একসময় মানুষের বিচারের উপর অনাস্থা প্রকাশ করে বলে এই দেশে বিচার নাই, তাহলে এটাকে কি অন্যায় বলা হবে?
তিনি বলেন, ‘বেঞ্চ গঠন করতে গিয়ে আমার মনে রাখতে হয়, যেই লোক বিচার পেতে বছর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরছে; তাদের কিভাবে বাড়ি ফেরানো যায়। বেঞ্চ গঠনের সময়, এটা আমার মনে রাখতে হয়।’
করোনার সময় অনেক বিচারপতি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঞ্চ গঠনের বেগ পেতে হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করি আমরা কিছু দিনের ভিতরেই নতুন বিচারক পাবো। তখন হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চের সংখ্যা আরও বাড়বে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যেভাবে বেঞ্চ গঠন করলে ভালো হয়, সেটাই আমি করার চেষ্টা করি।’
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের ১২ বিচারপতি করোনায় আক্রান্ত: প্রধান বিচারপতি
তিনি বলেন, আইনজীবীদের জায়গা সংকটের পাশাপাশি আমি মনে করি যারা গ্রামগঞ্জ থেকে সাধারণ মানুষ বিচারের আশায় উচ্চ আদালতে আসে, তাদেরও বসার জায়গা করার দরকার। এজন্য আমি যখন শপথ নেয়, তখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার প্রার্থীদের জন্য সব আদালত এলাকায় বসার জায়গা করার জন্য শেড নির্মানের অনুরোধ করি। তিনি তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে যান। এখন কথা হলো টাকা তো আমার হাতে থাকে না। আলাদিনের চেরাগ পেলে আমি সাথে সাথে আপনাদের দাবি পূরণ করে দিতাম। তারপরও কথা হলো আমাদের প্রধান সমস্যা হলো জায়গার। আমাদের এখন যতটুকু জায়গা আছে তার মধ্যে আগামী ১০০ বছরের প্ল্যান করতে হবে। প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমাদের মহাপ্লান করে এগোতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইন পেশার সুমহান মর্যাদা রক্ষা করতে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে বার (আইনজীবী) ও বেঞ্চ (বিচারক)কে সোচ্চার থাকতে হবে। আইনজীবীদের প্রতি একান্ত প্রত্যাশা থাকবে যে, আদালতের পবিত্র অঙ্গন থেকে অসাধু ও প্রতারক চক্রকে উচ্ছেদের মাধ্যমে এই অঙ্গনকে কলুষ মুক্ত করবেন।
আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘খেটে খাওয়া সর্বস্ব হারানো মানুষকে আইনের সেবা প্রদানের সুযোগ আপনাদেরই করে দিতে হবে। জীবন যুদ্ধে ক্লিষ্ট মানুষগুলোর জায়গায় একবার নিজেকে ভাবুন, মুহূর্তে তাদের কষ্টে ভারাক্রান্ত হয়ে যাবেন। বিচার প্রত্যাশি জনগণের হয়রানি নিরসনে আপনাদের হৃদয় নিংড়ানো আন্তরিকতা খোদার কাছে ইবাদতের মর্যাদা পাবে।’
এসময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ফেল করলে আইনের শাসন ফেল করবে। আইনের শাসন ফেল করলে ডেমোক্রেসি ফেল করবে। ডেমোক্রেসি ফেল করলে রাষ্ট্র অকার্যকর হয়ে যাবে। সেজন্য আমরা আমাদের স্ব-স্ব দায়িত্ব পালন করবো।’
সমিতির সভাপতি মো. এহিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. আমির উল ইসলাম। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার, বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সারোয়ার জাহান বাদশা, সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরী ও ইমাম হোসেন।
আরও পড়ুন: আদালতে মানুষের দুর্দশার সুযোগ নেয়া বরদাশত করা হবে না: প্রধান বিচারপতি