বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০’ এর উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের শিল্প, সাহিত্য এবং সংস্কৃতি আরও উন্নত করে শুধু দেশের মধ্যেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চাই।’
রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী এ মেলা শুরু হয়েছে।
বাংলা অনুবাদ সাহিত্যের উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার মানুষ আমাদের সাহিত্য এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক। যদিও বাংলা একাডেমি এবিষয়ে পর্যাপ্ত উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
শেখ হাসিনা ছাত্রজীবনের মতো অমর একুশের গ্রন্থমেলায় স্বাধীনভাবে ঘুরতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করেন।
এ বইমেলাকে নিজের ভালো লাগার অনুষ্ঠান উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে সবসময় এটাই দুঃখ লাগে যে, এখন আর সেই স্বাধীনতা নেই আগে যেমন ছাত্রজীবনে এখানে (বই মেলায়) দিনের পর দিন . . . ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম এবং ঘুরে বেড়াতাম। তারপরও আমি বলব এই বইমেলা আসলেই ভালো লাগে।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের একুশে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হয়েছে সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ প্রদান করেন।
এবারের পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য), মকিদ হায়দার (কবিতা), ওয়াসি আহমেদ (কথাসাহিত্য), স্বরোচিষ সরকার (প্রবন্ধ / গবেষণা), খায়রুল আলম সবুজ (অনুবাদ), রহিম শাহ (শিশুসাহিত্য), রতন সিদ্দিকী (নাটক), নাদিরা মজুমদার (কল্পনাবিজ্ঞান), ফারুক মঈনউদ্দিন (আত্মজীবনী / ভ্রমণকাহিনী) এবং সাইমন জাকারিয়া (লোককাহিনী)।
পুরস্কার প্রাপ্তরা তিন লাখ টাকার চেক এবং ক্রেস্ট গ্রহণ করেন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি প্রতিবছর সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করে থাকে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ বইটি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তার জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রকাশিত ১০০টি নতুন বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বই।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে তার জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক নিয়ে বাংলা একাডেমি আজ থেকে পর্যায়ক্রমে ১০০টি নতুন বই প্রকাশ শুরু করেছে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
পরে প্রধানমন্ত্রী বইমেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।
রবি থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বইমেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। এছাড়া ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।
আগের বছরের মতো বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং একাডেমির সামনে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিট মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আটজন বাঙালির আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিবছর মাসব্যাপী এই বইমেলার আয়োজন করা হয়।