নিজের সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমার ব্রুনাই সফর দুদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।’
গত ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল ব্রুনাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি দ্বিপাক্ষিক সফর সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সফরকালে তিনি সুলতান হাসানাল বলকিয়ার সাথে তার প্রাসাদে আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক খাতে অসামান্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেন ব্রুনাইয়ের সুলতান।
প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে তিনি উচ্চ-পর্যায়ের সফর, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, খাদ্য, কৃষি, মৎস, জ্বালানি, আইসিটি ও বিমান যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরেন।
জবাবে ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রস্তাবগুলোকে স্বাগত জানান এবং তা বাস্তবায়নে একসাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। ব্রুনাই ব্যাপক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা, বিশেষ করে কৃষি ও খাদ্য খাতে উৎসাহ দেখিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
উভয় পক্ষ অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাই এবং এ লক্ষ্যে যৌথ সমীক্ষা চালানোর বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।
এছাড়া, তারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, জ্বালানি, আইসিটি, জাহাজ নির্মাণ, ম্যানুফ্যাকচারিং, পর্যটন অবকাঠামো, সমুদ্র অর্থনীতি ও পাট শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি পারস্পরিক বিনিয়োগ প্রসারে একমত হয়েছেন।
দুই নেতা তাদের দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, উভয় পক্ষ প্রতিরক্ষা, বিশেষ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্ঞান বিনিময়, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক কার্যক্রমে সহযোগিতা গভীর করায় জোর দিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের মানবিক আচরণ ও উদার সাহায্যের প্রশংসা করেন। তিনি এ সংকটের ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী সমাধানের প্রতি জোর দেন। সেই সাথে তিনি রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানের সাথে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় তার সমর্থন জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ও ব্রুনাইসহ ওআইসির পাঁচ সদস্য দেশ নিয়ে আঞ্চলিত অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ নিয়েছে তাতে ব্রুনাইয়ের সুলতান সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
সেই সাথে হাসানাল বলকিয়া আসিয়ানের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ফলপ্রসূ আলোচনার পর কৃষি, মৎস, পশুসম্পদ, এলএনজি, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতি ও শিল্প বিষয়ে সহযোগিতার জন্য ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সেই সাথে কূটনৈতিক এবং সরকারি পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি বিষয়ে একটি নোট বিনিময় হয়েছে।
দুই দেশ সম্ভাব্য স্বল্প সময়ে ঢাকা ও বন্দর সেরি বেগাওয়ানের মাঝে বিমান চলাচল বিষয়ে একটি চুক্তি করতে একমত হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।