ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি প্রশ্ন করেন, এই ভাষা আন্দোলনের জন্য বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। তার কোনো অবদান না থাকলে তিনি কেন জেলে ছিলেন?
সোমবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক-২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: ‘আইডিএফ গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ফর ডায়াবেটিস’ পদক পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও দুটি প্রতিষ্ঠানের মাঝে পদক বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানটি মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত করেছিল। অথচ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আসলে তার (বঙ্গবন্ধুর) নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ভাষা আন্দোলনেও তার অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, এমনকি অনেক বিজ্ঞজনও বলেছিলেন যে তিনি (বঙ্গবন্ধু) সেসময় জেলে থাকায় তার কোনো অবদান নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের কয়েক মাসের মধ্যে তিনবার বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকাকালীন ছাত্রনেতারা তার সঙ্গে দেখা করতেন এবং ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে তার নির্দেশনা নিতেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন বঙ্গবন্ধু’- বইগুলো পড়লে এসব তথ্য জানা যাবে।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরে সহায়তা করুন: জাতিসংঘের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন বঙ্গবন্ধু’- বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের ১১৩-১৩০ পৃষ্ঠা থেকে সুনির্দিষ্ট তারিখ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হওয়া ছাত্র নেতাদের নাম এবং ভাষা আন্দোলনের সময় তার ভূমিকা সম্পর্কে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
‘অমর একুশে’ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে খালেদা মঞ্জুর-ই খুদা, মুক্তিযোদ্ধা একেএম শামসুল হক (মরণোত্তর) এবং হাজী মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভাষা আন্দোলনে তাদের ভূমিকার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন।
মাসুদ আলী খান এবং শিমুল ইউসুফ শিল্পকলা বিভাগে অবদানের জন্য মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার পেয়েছেন।
সংগীত বিভাগে মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আবদুল হাকিম এবং ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর); আবৃত্তি বিভাগে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়; শিল্পকলায় নওয়াজিশ আলী খান এবং চিত্রকলা বিভাগে কনক চাঁপা চাকমা পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে মমতাজ উদ্দিন (মরণোত্তর); সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর); গবেষণায় ড. মো. আব্দুল মজিদ; শিক্ষায় অধ্যাপক ড. মযহারুল ইসলাম (মরণোত্তর); সমাজসেবায় মো. সাইদুল হক ও অ্যাডভোকেট ড. মঞ্জুরুল ইসলাম (মরণোত্তর); রাজনীতিতে ও আকতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে ড. মনিরুজ্জামান পুরস্কার পেয়েছেন।
শিক্ষা ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং সমাজসেবায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন পুরস্কার পেয়েছে।
প্রত্যেক পুরস্কারপ্রাপ্তকে একটি করে স্বর্ণপদক, সম্মাননা সনদ এবং চার লাখ টাকার চেক দেয়া হয়।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এটি সঞ্চালনা করেন ও পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রশংসাপত্র পাঠ করেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে একুশে পদক প্রবর্তিত হয়।
আরও পড়ুন: বিরোধীরা আমার ব্যর্থতা খুঁজে পেলে সংশোধন করব: সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত’