চাঁদপুরের হাইমচরে মেঘনা নদীতে সার বহনকারী এমভি আল বাখেরা জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘিরে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আলোর মুখ দেখেছে।
র্যাবের দেওয়া তথ্য অনুসারে, আকাশ মণ্ডল ইরফান নামের ওই যুবক জাহাজের কর্মকর্তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করলেও দীর্ঘ ৮ মাস ধরে তাকে বেতন-ভাতা দিতেন না মাস্টার গোলাম কিবরিয়া। এমনকি, প্রায়ই তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। এসব থেকে থেকে একটু একটু করে ক্ষোভের পাহাড় জমা হয় ইরফানের মনে। আর তা থেকেই মাস্টারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন তিনি।
তবে প্রাথমিকভাবে মাস্টার কিবরিয়া ছাড়া আর কাউকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল না ইরফানের। কিন্তু মাস্টারকে হত্যা করার ঘটনা দেখে ফেলায় বিপদে পড়েন বাকিরাও। একে একে ইরফানের শিকার হন তারাও।
র্যাবের ভাষ্যমতে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইরফান জানিয়েছেন, জাহাজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বাজার করতে পাবনার একটি বাজারে নামেন তিনি। সেখান থেকে বাজারের কেনাকাটার পাশাপাশি ৩ পাতা ঘুমের ওষুধও কিনে নেন। এরপর খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে সবাইকে অচেতন করেন। পরে হাতে গ্লাভস পরে জাহাজের নিরাপত্তার জন্য রাখা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে সবাইকে কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। সবার মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে মনে হওয়ায় জাহাজ চালিয়ে হাইম চর এলাকায় পৌঁছে অন্য একটি ট্রলারে করে তিনি পালিয়ে যান।
এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে এলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরে গলায় কুড়ালের কোপে আহত হয়েও বেঁচে যাওয়া জুয়েল নামের একমাত্র ব্যক্তি জানান, তিনিসহ মোট ৯ জন জাহাজে ছিলেন। নবম ওই ব্যক্তির নাম ইরফান। তবে তার সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানেন বলে লিখে জানান তিনি।
আহত জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানিয়েছে নৌ পুলিশ।
আরও পড়ুন: জাহাজে ডাকাতিকালে ৭ খুন: স্বজনদের দাবি ‘পরিকল্পিত হত্যা’
এছাড়া গতকাল রাতেই এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মোর্শেদ।
এরপর অভিযান চালিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা থেকে ইরফানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকালে তার কাছ থেকে হ্যান্ড গ্লাভস, লোট ব্যাগ, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা, রক্তমাখা জিন্স প্যান্ট ও খুন হওয়া ব্যক্তিদের পাঁচটি মোবাইল ফোনসহ মোট ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব ১১ কুমিল্লার উপ-অধিনায়ক মেজর সাকিব হোসেন।
২৬ বছর বয়সী আকাশ মণ্ডল ইরফান বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকার জগদীশ মণ্ডলের ছেলে।
এর আগে, সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে হাইমচরের মেঘনা নদীর ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করে রাখা সারবাহী জাহাজ থেকে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। একইসঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের দুজনের মৃত্যু হয়।
আরও পড়ুন: জাহাজে ডাকাতিকালে ৭ খুন: তদন্ত কমিটি গঠন
ঘটনাটি শুরুতে ডাকাতি বলে ধারণা করা হলেও মঙ্গলবার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গ থেকে নিহতদের স্বজনরা লাশ গ্রহণের সময় এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তারা।
পরে গতকালই চাঁদপুর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একরামুল সিদ্দিককে প্রধান করে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও জেলা পুলিশের সমন্বয়ে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।