ফরটিফাই রাইটস মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বলেছে, মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের উচিৎ বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সদস্য দেশগুলোর উচিৎ রোম সংবিধির ১৪ অনুচ্ছেদের অধীনে দেশের পরিস্থিতি চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পাঠানো।
মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের হপন নিয়ো লেইক গ্রামে ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী হামলার সময় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারে হামলা, হত্যা, বেসামরিক বাড়িঘর ধ্বংস এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ঘটনা নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই রাইটস। এসব হামলা যুদ্ধাপরাধের শামিল হতে পারে।
ফরটিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেন, ‘যুদ্ধের আইন জান্তা বাহিনী ও সংঘাতের সমস্ত পক্ষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং যখনই সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের আসন্ন আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে।’
আরও পড়ুন: নৃশংস অপরাধের জন্য মিয়ানমার থেকে আসা বিজিপি সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে, সামরিক হামলার কার্যকর সতর্কবার্তা বেসামরিক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারত। জান্তার নৃশংস অপরাধ নিত্যদিনের ঘটনা। আইসিসির সদস্য দেশগুলোর উচিৎ জরুরি ভিত্তিতে পরিস্থিতি আদালতের কাছে পাঠানো এবং জান্তাকে বার্তা দেওয়া যে এসব হামলা অগ্রহণযোগ্য।’
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে শুরু করে টানা চার দিন ধরে উত্তর রাখাইন রাজ্যের বুথিডং টাউনশিপের হপন নিয়ো লেইক গ্রামে গোলাবর্ষণ করেছে।
২৪ জানুয়ারি আরাকান আর্মি হপন নিয়ো লেইকে পরিখা খনন করার পর এই হামলা শুরু হয়।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তার চার দিনের গোলাবর্ষণের ফলে ৪৪ জন বেসামরিক লোক হতাহত হন।এর মধ্যে কমপক্ষে ১২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত ও ৩২ জন আহত হন, যাদের মধ্যে ৮ শিশু ছিল এবং সবাই রোহিঙ্গা।
ঘটনাস্থল সূত্রে জানা গেছে, হামলায় হপন নিয়ো লেইক ও আশপাশের এলাকা থেকে শিশুসহ ১৫ হাজার বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
একজন কমিউনিটি ভিত্তিক কর্মী এবং হপন নিয়ো লেইকের বাসিন্দা গ্রামে ধ্বংস হওয়া ৪১টি বেসামরিক বাড়ি চিহ্নিত করেছেন। ওই এলাকায় আনুমানিক ১ হাজার বাড়ি রয়েছে।
বেসামরিক ভুক্তভোগী এবং আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের পাশাপাশি ধ্বংসপ্রাপ্ত সম্পত্তির মালিকদের নাম এবং শনাক্তকরণের তথ্য ফরটিফাই রাইটসের ফাইলে রয়েছে। তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ফরটিফাই রাইটস বিশ্বাস করে যে মিয়ানমারের জান্তার লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন (এলআইডি) ২২, লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন (এলআইবি) ৫৫১ ও মিলিটারি অপারেশনস কমান্ড (এমওসি) -১৫ সম্ভবত এই হামলার জন্য দায়ী এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য তাদের তদন্ত করা উচিৎ।
২০২৪ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ফরটিফাই রাইটস হপন নিয়ো লেইক গ্রামের চার বাসিন্দাসহ হামলায় বেঁচে যাওয়া ছয় রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেয়।
ফরটিফাই রাইটস মোবাইল ফোনের ভিডিও এবং কয়েক ডজন ছবি পর্যালোচনা করে দেখেছে যাতে আহত বেসামরিক নারী, পুরুষ ও শিশুদের পাশাপাশি জ্বলন্ত ভবন এবং বাড়িঘর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে।
হপন নিয়ো লেইকের বাসিন্দারা ফরটিফাই রাইটসকে বলেছেন, আরাকান আর্মি ২৪ জানুয়ারি গ্রামে পরিখা খনন করেছিল।
হপন নিয়ো লেইক গ্রামের ২২ বছর বয়সী এক কৃষক ফরটিফাই রাইটসকে বলেন, ‘আমার গ্রামে অনেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১০ জনের বেশি লাশ দেখেছি। এত ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছিল যে আমি ও অন্যরা বাকি মৃত বা আহত গ্রামবাসীদের সন্ধান করার সাহস পাইনি।’
আরও পড়ুন: মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান: ইইউ রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী