যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্পের যাবতীয় নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১১ জুনের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) এসব নথি আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার জনস্বার্থে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুবউল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
‘যমুনা নদী ছোট করার চিন্তা’- শিরোনামে গত ১১ মার্চ প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি জাতয়ি দৈনিক। এই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন আইনজীবী।
যমুনা নদী ছোট করার প্রকল্প নেওয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ -এর বিধি ২ অনুসারে অসদাচরণ করেছেন। তাই বিধি ৩ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে। সেই সঙ্গে রুল চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: হাইকোর্ট বেঞ্চে ‘বকশিশ’ নিষিদ্ধ, নির্দেশনা জারি
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ বিদান অনুসারে এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা অসদাচরণ করেছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়েছিলাম। গত ২১ মে হাইকোর্ট প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের তালিকা চান। সেই সঙ্গে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে কিনা এবং প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সত্যতা কতটুকু, তা জানতে চেয়েছিলেন। রবিবার রাষ্ট্রপক্ষ এসব তথ্য জানাতে সময় চাইলে হাইকোর্ট প্রকল্পের নথি তলব করেন।’
প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা কিভাবে অসদাচরণ করেছেন, জানতে চাইলে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ -এর ২ বিধিতে অসদাচরণের সংজ্ঞা দেওয়া আছে। সে সংজ্ঞা অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীরা সরকারের নির্দেশ অমান্য করলে অসদাচরণ হয়। আর কোনো কর্মচারীর অসদাচরণ প্রমাণ হলে বিধি ৩ অনুসারে সে কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
এ আইনজীবী বলেন, ‘নদী খনন করে প্রবাহ ঠিক রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে, একনেকের সিদ্ধান্ত আছে। আরেকটা সিদ্ধান্ত আছে নদী-খাল-জলাশয় দখল করে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। ফলে যেসব কর্মকর্তারা এই প্রকল্প নিয়েছেন তারা সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন। এটা অসদাচরণ। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা নদীকে ছোট করতে চায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আপাতত দেশের দু’টি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রোয়েন বাঁধ দিয়ে নদী ছোট করা হবে।
যমুনা নদীকে ছোট করার পেছনে যুক্তি তুলে ধরে পাউবো বলছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যমুনা নদী চওড়া হচ্ছে। নদী কোথাও কোথাও ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত হচ্ছে। এতে নদীভাঙন বাড়ছে।
পাউবো মনে করে, এত চওড়া নদীর প্রয়োজন নেই। এটি সংকুচিত করে সাড়ে ছয় কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হবে। যমুনা নদী ছোট করলে দু’টি সুফল পাওয়ার কথা বলছে পাউবো। একটি হলো, নদীর ভাঙন কমবে। অন্যটি বিপুল পরিমাণে ভূমি পুনরুদ্ধার করা যাবে।
নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীকে ছোট করার চিন্তা নির্বুদ্ধিতার। যাদের মাথা থেকে এসব চিন্তা আসে, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কোনো যুক্তিতেই যমুনাকে সংকুচিত করা যাবে না। এটি বিশ্বে এক অনন্য নদী। এ নদীকে নিয়ে যেকোনো ধরনের পরীক্ষা যেন সাবধানে করা হয়। তবে বিস্তারিত সমীক্ষা না করে গ্রোয়েন প্রযুক্তির প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
আরও পড়ুন: বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সাক্ষাৎ